শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

শিরোনাম

৭১ এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাঙালিদের

মঙ্গলবার, অক্টোবর ৪, ২০২২

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ৫০ হাজার মানুষসহ বাংলাদেশের মাটিতে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা ও প্রায় চার লাখ নারীকে নির্যাতন করে । কিন্তু এ গণহত্যার কোন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলে নি এখনো। ২৫ মার্চকে জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে সমাবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আর্র্টিস ফোরাম, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জেনোসাইড ৭১, গণজাগরণ মঞ্চ, আমরা ৭১, প্রগ্রেসিভ ফোরাম, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, একুশে চেতনা পরিষদ, প্রজন্ম একাত্তরসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ১৬টি সংগঠন এ সমাবেশের আয়োজন করে।

গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে তিন নম্বর এজেন্ডায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সংঘটিত পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর নৃশংস জেনোসাইড নিয়ে আলোচ্যসূচি থাকলেও ওই অধিবেশনে তা উত্থাপিত হতে পারে নি।

নেদারল্যান্ডসে বসবাসরত বাংলাদেশের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ উদ্যোগটি নিয়েছিল। সময় স্বল্পতার কারণে ইস্যুটি শেষ পর্যন্ত আলোচিত হয় নি। আমরা ৭১, প্রজন্ম ৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রকল্প, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উত্তর বাংলা জাদুঘরসহ দেশের বেশ কয়েকটি সংগঠন বিষয়টিতে নজর রাখে। এ সম্মিলিত প্রচেষ্টার অর্জন হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর জাতিসংঘ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। এর ধারাবাহিকতায় ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ৫১তম অধিবেশনের তিন নম্বর এজেন্ডায় ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইআরটিএ, আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম একাত্তরের সম্মিলিত আবেদনে এ এজেন্ডা ফের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

শুক্রবারের (৩ অক্টোবর) সমাবেশ উদ্বোধন করেন ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান। চিত্রাংকন পর্বের উদ্বোধন করেন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মিথুন আহমেদ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল, লুৎফুন্নাহার লতা, সুব্রত বিশ্বাস, মুজাহিদ আনসারী, মিনজাহ আহমেদ শাম্মু, সেমন্তি ওয়াহেদ।

বক্তব্য দেন ফেরদৌস খন্দকার, শরাফ সরকার, আল আমিন বাবু, তাজুল ইমাম, আব্দুল বাতিন, রেজাউল বারী বকুল, নিনি ওয়াহেদ, ফাহিম রেজা নুর, ওবায়দুল্লাহ মামুন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। পাকিস্তানি বাহিনীর সেই নৃশংসতার পর রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি, স্বাধীনতার জন্য শুরু হয়েছিল সশস্ত্র সংগ্রাম। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল স্বাধীনতা।’

২০১৭ সালে জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার পর থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালনের দাবি রয়েছে বাংলাদেশের, কিন্তু সেই স্বীকৃতি আজো মেলে নি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমামের নেতৃত্বে শিল্পীরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্র অংকন করেন। সমন্বয়ে ছিলেন সনজীবন কুমার, জাকির হোসেন বাচ্চু। গণজাগরণ মঞ্চের জাকির আহমেদ রনি, মহিলা পরিষদের সুলেখা পাল, উদীচীর হিরো চৌধুর, প্রোগ্রেসিভ ফোরামের আলীম উদ্দিন, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের লাভলু আনসার ও রাশেদ আহমেদ।

নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার শপথ গ্রহণ ও বিশাল ক্যানভাসে লাল-সবুজ রংয়ের হাতের ছাপচিত্র দেয়। সমাবেশে জাতীয় সংগীত পরিবেশনসহ মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্লোগান দেয়া হয়।