রামপাল, বাগেরহাট: রামপালে দুই হাজার ৬৬০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পের ইউনিট-১ আগামী অক্টোবরে বাণিজ্যিকভাবে চালু করা হবে। এটি দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে তুলবে। এ জন্য জাতীয় গ্রিডের সাথে সফল সিঙ্ক্রোনাইজেশনসহ সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতাকে আরো শক্তিশালী করার একটি বড় পদক্ষেপ হিসাবে দুই হাজার ৬৬০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের ইউনিট-১ গত ১৫ আগস্ট সফলভাবে জাতীয় গ্রিডে ৯১ দশমিক সাত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সিঙ্ক্রোনাইজেশন করা হয়েছিল। প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ কেন্দ্রটির লক্ষ্য হল দুইটি ইউনিটে (প্রতিটিতে ৬৬০ মেগাওয়াট) মোট এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা।
আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ নির্মাণের সমাপ্তি বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রটি পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এ মেগা অবকাঠামো নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে – যা চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ও আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিকভাবে চালু করার লক্ষ্যে রয়েছে।
প্রকল্পস্থলে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে জানান, তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে কারখানাটির প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিকভাবে চালানো হবে।
তিনি বলেন, ‘নির্ভরযোগ্যতা পরীক্ষা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। ইউনিট-১ এর বাণিজ্যিক উৎপাদন অনেক আগেই শুরু করা সম্ভব হতে পারত, যদি করোনা ভাইরাসের কোন প্রভাব না থাকত। কারণ মহামারীটি এক বছরেরও বেশি সময় খেয়ে ফেলেছিল।’
বিদ্যৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা ইতিমধ্যে কেন্দ্র এলাকায় পৌঁছেছে ও সেপ্টেম্বরে কয়লা বোঝাই আরো দুইটি জাহাজ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
প্রকল্প পরিচালক জানান, একটি দীর্ঘ মেয়াদি কয়লা চুক্তি ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে।
সুভাষ চন্দ্র পান্ডে বলেন, ‘দৃশ্যত পরিবেশগত সমস্যাগুলোকে আরো সুবিবেচনাপূর্ণভাবে মোকাবেলা করার জন্য চারটি বিশাল শেড নির্মাণ করা হচ্ছে, যার কয়লা মজুত ক্ষমতা দশ লাখ মেট্রিক টন। এক বার এ শেডগুলো সম্পন্ন হলে, এটি উভয় ইউনিটের তিন মাসের অপারেশন চালানোর জন্য যথেষ্ট হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `এ ধরনের কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ আমদানিকৃত কয়লার দামের ওপর নির্ভর করে এবং তাও পরিবর্তনশীল। এটা নির্ভর করে বাইরের কয়লার দামের ওপর ও আমদানি করা কয়লার বাজার দামের ওপরও।’
তিনি জানান, কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে কয়লা আমদানি করা হবে।
মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পটি ভারত সরকারের কনসেশনাল ফাইন্যান্সিং স্কিমের অধীনে নির্মিত হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) জন্য নির্মাণ করছে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল)। প্রকল্পটি ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) মধ্যে একটি ৫০:৫০ জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। এক হাজার ৩২০ (দুই হাজার ৬৬০) মেগাওয়াট কয়লা চালিত তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে ও এটি খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার রামপালে অবস্থিত।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ভৌত অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ০৫ শতাংশ, যার ব্যয় ১৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক মোট ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে।