ঢাকা: পৃথিবীর শক্তিশালী দেশগুলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও বিষয়টি নিয়ে বেশ সরব বাংলাদেশ। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের কাজকর্ম দিয়ে তাদের নিজেদের মত করে নেয়ার (অ্যাবজর্ব) পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যান। রোববার (১৩ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাককর্মিক এমন পরামর্শ দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে রোহিঙ্গা নিয়ে কথা হয়েছে। তারা (কংগ্রেসম্যান) বলেছে, এই জনগোষ্ঠীর কাজকর্ম তো কিছুই নেই। আপনারা তাদের কাজকর্ম দেন, তাদের অ্যাবজর্ব করে নেন।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
তিনি কংগ্রেসম্যানদের বলেন, ‘দুনিয়াতে আমরা সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। আমাদের এখানে প্রতি বছর গড়ে ২০ লাখ ছেলে-মেয়ে মার্কেটে আসছে। তাদের সবাইকে আমরা চাকরি দিতে পারি না। তারা বিদেশে গিয়ে কর্মী ভিসায় কাজ করেন। রোহিঙ্গাদের কীভাবে কাজ দেব? তারা নিজ দেশে ফেরত যেতে চায়। আমরাও চাই, তারা ফেরত যাক। আপনারাও কিছু নিয়ে যান। আপনারা বলেছিলেন, কিছু নেবেন। একটাও নেননি।’
বৈঠকে বিরোধী দলের সাথে আপসের সুযোগ নেই জানিয়ে মন্ত্রী কংগ্রেসম্যানদের বলেন, ‘বিরোধী দল যে সরকার পতনের দাবি করছে, তাতে সমঝোতার সুযোগ নেই।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘কংগ্রেসম্যানরা বলেছেন, আপনাদের কোন সমঝোতার পথ আছে কি না; আমরা বলেছি, তাদের যে দাবি- সরকার পতন হবে, তাতে সমঝোতার কোন সুযোগ দেখি না। আপনাদের দেশে নির্বাচনের সময় কি সরকারের পতন হয়, নিশ্চয়ই না। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব। তাতে সবাই অংশগ্রহণ করুক, তা আমরা চাই। কে জয়ী হবে, কে হবে না, তা জনগণের ওপর নির্ভর করে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা অনেক ভাল কাজ করেছি।’
আব্দুল মোমেন আরো বলেন, ‘আমরা নিজেদের তাগিদেই একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করব। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার। আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনে বিশ্বাস করে। জনগণের সমর্থনেই আমরা আছি। সব দল যদি আন্তরিকভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ও সিদ্ধান্ত নেয়, তারাও অবাধ-সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন চায়। তাহলেই সহিংসতামুক্ত নির্বাচন হবে। গেল কয়েকটা নির্বাচন ভাল হয়েছে। কোন সহিংসতা হয়নি।’
‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব দল-মতের লোকের আন্তরিকতা দরকার। আমরা বলেছি, আমাদের দেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ আপনাদের দেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। আপনাদের দেশের লোকজন ভোটই দেন না। আমাদের এখানকার অধিকাংশ লোক ভোট দেন। আমাদের এখানে ৭২ শতাংশের মত লোক ভোট দেন। আপনাদের ওখানে লোকজন ভোটে দাঁড়ায়নি। আর এখানে একটি নির্বাচনে কয়েক শত লোক প্রার্থী হন।’ যোগ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই, যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক লোকদের সাথে আরো আলোচনা হোক। এতে দুই দেশের মধ্যে জানাশোনা হয়, আর মিথ্যা প্রচারও কমবে। কারণ, অনেক সময় এই ধরনের প্রচার হয়েছে যে, বাংলাদেশ একেবারে ভয়ংকর জায়গা। এখানে কেউ এলেই মেরে ফেলবে। মানুষ কষ্টে আছে, রাস্তাঘাটে লোক মেরে ফেলে। এসে দেখে, এ ধরনের কিছু না। তখন তারা একেবারে আকাশ থেকে পড়ে।’
‘আমরা চাই, তাদের আরো লোক আসুক। নিজ চোখে দেখে যাক। যাতে পক্ষপাতিত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে যাতে কোন সিদ্ধান্ত নেয়া না হয়।’ বলেন মন্ত্রী।
কংগ্রেসম্যানরা কোন ফর্মুলা দিয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা কোন ফর্মুলা দেয়নি। তাদের কাছে বিভিন্ন লোক বলেছেন যে, বাংলাদেশ একটি ভয়ংকর জায়গা। যেখানে কেবল অশান্তি। আর পুলিশ সব লোককে ধরে মেরে ফেলছে। তারা চীনের খাপ্পরে পড়েছে। চীনের গোলাম হয়ে গেছে। তাদের মধ্যে এই ধরনের ধারণা তৈরি হয়েছে।’
চীন নিয়ে কিছু বলেছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা বলেছেন, আপনারা চীনের ভেতরে চলে যাচ্ছেন। আমরা বলেছি, জি না, আমরা চীনের ঋণফাঁদে যাচ্ছি না। চীন থেকে আমরা যে ঋণ নিয়েছি, তা এক শতাংশের মত। এটা বড় কিছু না।’