ফেনী: ‘নিজ জেলায় উপকূলে একটি রিসোর্ট হলে ভাল হত, বিস্তীর্ণ মাঠ ও পানির সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত।’ কথাটি বলছিলেন, ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফেনীর ছেলে চৌধুরী মুহিব মিশু।
ফেনীর বাইরে বসবাসরত অনেকেই ছুটি কাটাতে চান নিজ জেলায়। তাদের চাওয়া, ফেনীর পর্যটন গড়ে উঠুক পেশাদারিত্ব নিয়ে। যেখানে থাকবে নীরবতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সব ধরনের পর্যটন সুবিধা।
বিশ্বব্যাপী পর্যটন এখন বৃহৎ শিল্প। বলা হয়ে থাকে, ‘প্রতি ১২ জনে একজন পর্যটন খাত হতে জীবিকা নির্বাহ করেন। যদিও বাংলাদেশ এখনো পর্যটনকে শিল্পে রূপান্তরের চেষ্টায় রয়েছে।’
ফেনীর পর্যটনে অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ, ভ্রমণ পিপাসু ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। ফেনীর সন্তান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এজিএম নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ফেনী হচ্ছে প্রকৃতির অপরূপ দান। এক দিকে নদী উপকূল, অন্য দিকে পাহাড়। মাঝে পাঁচ নদী ঘিরে সবুজের সম্মিলন। রয়েছে ঐতিহাসিক স্থাপনা, প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। এত কিছু খুব কম জেলাতেই রয়েছে, যা পর্যটন বিকাশে খুবই সহায়ক।’
সোনাগাজীর সন্তান, চবির নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আলা উদ্দিন বলেন, ‘উপকূল, দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ মুহুরী সেচ প্রকল্প ও ইকোনমিক জোন মিলে সোনাগাজী দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বিনোদন পার্ক, রিসোর্ট ও পর্যটন সেবা নিশ্চিত হলে এখানে পেশার ব্যাপক গতিশীলতা তৈরি হবে। আয়ের নতুন খাত তৈরি হবে।’
শিল্পোদ্যোক্তা মিজানুর রহমান একই বিষয়ে বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি মানুষের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থা। বিশ্রাম ও বিনোদন মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। ফেনীতে পর্যটনের সম্ভাবনা ব্যাপক। সোনাগাজীতে রয়েছে নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। সৌন্দর্যপিপাসুকে পানি সব সময় কাছে টানতে চায়। প্রকৃতির এ সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারি। প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অবকাঠামো উন্নয়ন।’
ফেনীর পর্যটন নিয়ে ফেনী জেলার প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ‘ফেনীতে ব্যাপক আকারে পর্যটন বিকাশে সবধরনের সম্ভাবনা ও উপযোগিতা রয়েছে। জেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও রয়েছে পাকা সড়ক। রেস্তোরাঁ, আবাসিক হোটেল ও বড় শপিং মল সুবিধা রয়েছে। এখন প্রয়োজন বিনোদনের উপযোগী করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। সরকারের পক্ষ হতে দাপ্তরিক সবরকম সেবা উদ্যোক্তার জন্য রয়েছে। ফেনীর এক পাশে অবারিত শিল্পায়ন, অন্য দিকে প্রকৃতির দান। এখন প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ ও পর্যটন উপযোগী অবকাঠামো।’
তবে সম্ভাবনার বিপরীতে সুযোগ সীমিত। ফেনীর বিজয়সিংহ দিঘির দক্ষিণ পাড়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত হোটেল, রিসোর্ট ও অবকাশ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছে জেলা প্রশাসন। এর অপার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু এ সম্ভাবনার বিপরীতে সুযোগ সীমিত, এমন বৃহৎ ব্যয় সরকারিভাবে বহনের সুযোগ আপাতত নেই। এমন মন্তব্য আবু সেলিম মাহমুদ উল-হাসানের।
তিনি বলেন, ‘শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসতে হবে। বেসরকারীভাবে যদি রিসোর্ট ও অবকাশ কেন্দ্র তৈরি করা হয়; তাহলে জেলার পর্যটন সমৃদ্ধ হবে।’
ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনা। এসব স্থানের মধ্যে তালিকার প্রথম দিকে রয়েছে সোনাগাজীতে মুহুরী প্রজেক্ট বা মুহুরী সেচ প্রকল্প। জেলার এ উপজেলা জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূল। এছাড়া ফেনীর অন্যতম আরেকটি স্থান হচ্ছে ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত রাজাঝির দিঘি, মহিপালে বিজয় সিংহ দিঘি। ছাগলনাইয়ায় রয়েছে শিলুয়ার শিলপাথর, জগন্নাথকালী মন্দির, সাত মন্দির, কৈয়ারা দীঘি, শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ, চাঁদগাজী ভূঞা মসজিদ, বাঁশপাড়া জমিদার বাড়ি প্রভৃতি।
এছাড়া অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে সদরের কাজিরবাগ ইকো পার্ক, হর্টিকালচার সেন্টার, কালীদহ বরদা বাবু জমিদার বাড়ি, চৌধুরী বাগান বাড়ি,দাগনভূঁইয়া জমিদার বাড়ি, প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি, ফেনী নদী, ভাষা শহীদ সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, শর্শদীতে শাহী মসজিদ, সেনেরখিল জমিদার বাড়ি ইত্যাদি। রয়েছে হয়রত পাগলা মিয়ার তাকিয়া, শতাব্দী প্রাচীন ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল ও ফেনী সরকারী কলেজ, পরশুরামে রাবার বাগান, বাউরখুমা আশ্রয়ণ প্রকল্প। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন।