ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাবেক পর্নো তারকার সাথে সম্পর্কের কথা ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেয়ার মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দোষ স্বীকার না করে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। প্রথম বারের মত যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হলেন। অভিযুক্ত ট্রাম্প (৭৬) মঙ্গলবার (৪ মার্চ) আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পন করবেন বলে জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, এ সময়ে ট্রাম্পের হাতে হাতকড়া পরানো হবে না বলে তার অন্যতম এটর্নী জো টাকোপিনা জানিয়েছেন। তবে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) শুনানির আগে ট্রাম্পের আঙুলের ছাপ ও ছবি নথিভুক্ত করা হবে। হাতকড়া পরানো না হলেও আদালত এলাকায় তাকে ঘিরে থাকবেন শতাধিক এফবিআই সদস্য।
জো টাকোপিনা বলেছেন, ‘ট্রাম্প কোন অপরাধ করেননি। তাই, অপরাধ স্বীকারের প্রশ্নই আসে না।
ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে বর্তমানে অবস্থান করছেন ট্রাম্প। অভিযুক্ত হওয়ার খবরে তিনি প্রথমে বিস্মিত হন। এ খবর জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
তিনি আরো বলেছেন, ‘কিন্তু, প্রাথমিক ধাক্কা সামলিয়ে এখন ট্রাম্প লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।’
এ দিকে, আইনি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘এ মামলায় শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বরং, জরিমানা হওয়ার সম্ভবনা আছে।’
দোষী সাব্যস্ত হলেও নির্বাচন করতে পারবেন তিনি।
বলে রাখা ভাল, সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস দাবি করেন, ২০০৬ সালে তার সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর দশ বছর পর ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন, তখন স্টর্মি ড্যানিয়েলস মিডিয়ার কাছে সম্পর্কের ব্যাপারে মুখ খুলতে চান। মুখ বন্ধ করাতে আইনজীবীর মাধ্যমে ড্যানিয়েলসকে এক লাখ ৩০ হাজার ডলার দেন ট্রাম্প। এভাবে অর্থ দেয়া আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ নয়। কিন্তু, বিপত্তি বাধার কারণ, ট্রাম্প ওই এক লাখ ৩০ হাজার ডলারকে আইনি খরচ হিসেবে দেখিয়েছেন। ফলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক হিসাব জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে আগে ঘটায় নির্বাচনি আইন ভঙ্গেরও অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্বটি ছিল নিউইয়র্ক সিটির ডিস্ট্রিক্ট অ্যার্টনি অ্যালভিন ব্র্যাগের ওপর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্যে তিনি গ্রান্ড জুরি গঠন করেন। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) এ জুরি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের সিদ্ধান্ত জানায়। তবে, তার বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। কারণ, আদালতে বিচারপতি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে না পড়ে শোনানো পর্যন্ত এগুলো প্রকাশ করা হবে না।
ট্রাম্পকে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত করার তীব্র সমালোচনা করছেন রিপাবলিকান নেতারা। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত অগ্রহণযোগ্য।’
মার্কিন আইনি ব্যবস্থাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন ফ্লোরিডার রিপাবলিকান গভর্ণর রন ডিসান্টিস।
এ দিকে, ট্রাম্পের অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’
তবে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও পুরোপুরি ভিত্তিহীন।
একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কোন অন্যায় করেন নি।
বরং, তিনি ব্র্যাগকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, ‘২০২৪ সালে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে লাইনচ্যুত করতেই একজন ডেমোক্রেট ব্র্যাগ এ কাজ করেছেন।’