মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

অমিল কাটিয়ে ইসলামী দলগুলোর বড় রাজনৈতিক জোট তৈরির চেষ্টা

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: একই উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো। একটি বৃহত্তর জোট গঠন করে দেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পরস্পরের সাথে বৈঠক শুরু করেছে তারা। অমিল কাটিয়ে নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে ইতিবাচক প্রাথমিক আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন দলগুলোর নেতৃবৃন্দ।

ইসলামী ও সমমনা কয়েকটি দলের একাধিক নেতা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, গেল ১৫ বছর আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসনে বেশির ভাগ ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাই, ইসলামী দলগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার তাগিদ অনুভব করছেন শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।

তাদের প্রত্যাশা, গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামী দলগুলো বড় জোট গঠন করলে রাজনীতিতে নয়া একটি শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। নিজেদের মধ্যে মতের ভিন্নতা থাকলেও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার আলোকে রাষ্ট্র গঠনের অভিন্ন উদ্দেশ্যে তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

‘ইসলামী জোট’ গঠনের তৎপরতায় কিছুটা এগিয়ে আছে শীর্ষ স্থানীয় দুইটি ইসলামী দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ইতিমধ্যেই এ দুইটি দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সমমনা দলগুলোর বড় নেতাদের সাথে পৃথক বৈঠক করেছেন।

খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের মত পুরনো মিত্রদের সাথে জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা করছে দল দুইটি। এ ছাড়া জাকের পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইনসানিয়াত বিপ্লবের মত ইসলামী দলগুলোর সাথে নিয়মিত আলোচনা চলছে তাদের।

সমমনা দলগুলোর সাথে বৈঠকের ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে আমরা প্রতিটি ইসলামী দলের সাথে আলোচনা করব। আমরা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশে কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’

বৃহৎ জোট গঠনে গেল ২০ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কওমি মাদরাসাভিত্তিক কয়েকটি ইসলামী দলের সাথে বৈঠক হয়েছে। দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলধারার সাতটি ইসলামী দলের নেতাদের সাথে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েকটি অনিবন্ধিত ইসলামী দল ও গেল ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্যাতনের শিকার আলেম-ওলামাদের সাথে যৌথ মত বিনিময় করেছেন শফিকুর রহমান।

বৈঠক শেষে বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘ইসলামী দল ও সংগঠনগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য ও সংহতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইসলাম কায়েমের জন্য ছোটখাট মতভেদ ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমাদের সকলের মূল লক্ষ্য অভিন্ন, সমমনা দলগুলোর সাথে আমরা নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সকলের মধ্যেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আগ্রহ আছে। ইনশাআল্লাহ, ছোটখাট যেসব মতপার্থক্য আছে, সেগুলো আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করব।’

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক বিভিন্ন ইসলামী দলের সাথে আলোচনা করবেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীদের সাথে আমরা কোন আলোচনা করব না। এমন কোন চিন্তা-ভাবনা আমাদের নেই।’

সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামী দল ১১টি। এর বাইরে অনিবন্ধিত ছোট-বড় দল মিলিয়ে বাংলাদেশে ইসলামী দল রয়েছে প্রায় ৭০টি। এতে ধর্মীয় রীতিনীতি ও মতাদর্শ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মতপার্থক্য।

বৃহৎ ঐক্যের লক্ষ্যে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দূর করতে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনুস আহমাদ। সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনৈক্যের কারণেই ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সকলকে আলোচনা চালিয়ে নেয়ার তাগিদ দিয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে সব মতপার্থক্যের অবসান ঘটাতে হবে। কারণ, আমাদের সকলের লক্ষ্য অভিন্ন, ইসলামী শাসনব্যবস্থা কায়েম।’

জনগণের শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে ঐক্যের ডাক: সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘বিগত সময়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নির্বাচনে ইসলামভিত্তিক দলগুলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাথে জোটে শরিক হয়েছে। এবার সমমনাদের নিয়ে জোট গঠন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘জনগণের শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ দেখছেন দলগুলোর শীর্ষ স্থানীয় নেতারা। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী জোটের সাথে যারা ছিলেন, তাদের বাদ রেখেই ইসলামী জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছেন তাঁরা।’

ইসলামী দলগুলো বাংলাদেশের জনগণের জন্য ইসলামের আলোকে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে জোট গঠন করবে বলে জানিয়েছেন জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার। তিনি বলেন, ‘জোট গঠনে যে কোন ধরনের আলোচনার প্রস্তাব এলে আমরা অংশ নেব। আমরা অতীতে সব সরকারের যৌক্তিক সমালোচনা করেছি। জনগণ আমাদের ভূমিকা জানে। অতীতের যেসব জোট দেশের রাজনীতিতে অনাচার-দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণের শক্তি হিসেবে আমরা দাঁড়াতে পারব।’

নানা সময় জনগণের হয়ে সরব থাকা ইসলামী দলগুলোর এক ছাতার নিচে এসে অভিন্ন প্ল্যাটফরম গঠন করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসীর আলী বলেন, ‘বিগত সরকারগুলোর লুটপাট, সিন্ডিকেটসহ যাবতীয় জুলুমের বিরুদ্ধে আমরা সকলে কথা বলেছি। আমরা একসাথে রাজনীতি নির্মাণ করতে পারলে দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তিত হবে। আমাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আশা করি, শিগগিরই আমাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।’