নিউইয়র্ক: অ্যাডামস প্রশাসন শুরু থেকেই জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে এসেছে। এই মিশনের কেন্দ্রে রয়েছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রগুলোকে শহরের রাস্তাঘাট ও জীবন থেকে সরিয়ে ফেলা। ইতোমধ্যেই নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) ২১ হাজার ৪০০-রও বেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে বলে জানান সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস্।
সোমবার (এপ্রিল ২৮) কমিউনিটি অপ:এড-এ তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি জব্দ করা অনেক বন্দুক কাঠ কাটার যন্ত্রের সাহায্যে ধ্বংস করতে সাহায্য করেছি, যেন এগুলো দিয়ে আর কখনও কেউ কোনো প্রকার ক্ষতি করতে না পারে।’
অ্যাডামস্ জানান, ওয়েস্টবারির রিওয়ার্ল্ডে গত বৃহস্পতিবার (এপ্রিল ২৪) তার প্রশাসনের সদস্যরা, এনওয়াইপিডি, সহিংসতা প্রতিরোধে কাজ করা কর্মী, আগ্নেয়াস্ত্র বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, ধর্মীয় নেতা এবং সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবার – সবাই মিলে ঐসব প্রাণঘাতী অস্ত্র চিরতরে ধ্বংস করে ফেলার কাজে অংশ নেন। রিওয়ার্ল্ড নামের স্থাপনাটি হলো সেই জায়গা, যেখানে এনওয়াইপিডি তাদের মামলার প্রমাণস্বরূপ জব্দ করা অবৈধ অস্ত্রসমূহ প্রয়োজনে ধ্বংস করার জন্য পাঠায়।
অ্যাডামস্ বলেন, ‘এই অস্ত্রগুলো স্ক্র্যাপ মেটালে রূপান্তরিত হবে এবং পাঠানো হবে স্কুল অব কোঅপারেটিভ টেকনিক্যাল এডুকেশনে। সেখানে ওয়েল্ডিং প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা এই ধাতুগুলো দিয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করবে, যা বন্দুক-সহিংসতায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে থাকবে।’
অ্যাডামস্ আরো বলেন, ‘এটি ছিল এক মিশ্র অনুভূতির দিন। প্রতিটি ধ্বংস হওয়া অস্ত্র ভবিষ্যতের সহিংসতার একটি সম্ভাবনা বন্ধ করে দিলেও, আমাদের মনে করিয়ে দেয়- আমরা ইতোমধ্যেই কতগুলো মূল্যবান জীবন হারিয়েছি। তাদেরই একজন ছিলেন এক্সেনিয়া মেটে, হারলেমের এক প্রিয় বডেগা মালিক ও দাদী, যিনি গত সপ্তাহে গুলির লড়াইয়ের মাঝখানে পড়ে নিহত হন। এক্সেনিয়ার মৃত্যু একটি নির্মম বাস্তবতা- যে বন্দুক-সহিংসতা শুধু ব্যক্তিকে নয়, গোটা সম্প্রদায়কে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। এটাই সেই সমস্যা, যা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না, আবার প্রতিদিন সকালে উঠে কাজ শুরু করার শক্তিও জোগায়।’
অ্যাডামস্ মনে করেন, প্রতিটি ধ্বংস হওয়া অস্ত্র একটি জীবন বাঁচায়, সহিংসতার স্রোতের একটি ধারা থামায় এবং স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়- এই অস্ত্রগুলোর জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে কোনো জায়গা নেই।
তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের রাস্তাঘাট থেকে সরাতে হবে, তাদের হাত থেকে অবৈধ অস্ত্র কেড়ে নিতে হবে। আইন প্রয়োগ করতে হবে, অপরাধীদের বিচার করতে হবে এবং পুনঃঅপরাধের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। প্রত্যেক নিউ ইয়র্কারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে- তাদের এই বিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে যে, তাদের শহর তাদের পাশে আছে, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।’
অ্যাডামস্ প্রশাসন ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কের পরিবারগুলোর জন্য রাস্তাঘাট, সাবওয়ে এবং পুরো শহরকে আরও নিরাপদ করে তুলেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা টানা পাঁচটি ত্রৈমাসিকে অপরাধ কমার নজির দেখেছি, আর এই বছরের প্রথম তিন মাস ছিল নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম গুলির ঘটনা ঘটার সময়কাল। এটা আমাদের আগ্নেয়াস্ত্র বিরোধী কার্যক্রমের সরাসরি ফল এবং এনওয়াইপিডির এক বিশাল সাফল্য। পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ ইতোমধ্যে, ডেপুটি মেয়র কায ডট্রি আর সাহসী পুলিশ সদস্যরা মিলে পুলিশ বাহিনীকে নিরাপত্তার নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিপদ দেখলে পালান না, বরং সামনে এগিয়ে যান।’
অ্যাডামস্ প্রশাসনের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলে, নিউইয়র্ক সিটি দিন দিন আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ বৃহৎ শহর হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। তবে অ্যাডামস্ মনে করেন, এখানেই শেষ নয়।
‘আমরা এখানেই থামব না- আমরা চাই আরও পুলিশ, আরও নিরাপত্তা, আরও ফলাফল। এই প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে চলেছে যেন নিউইয়র্ক সিটি সর্বদাই বিশ্বের সেরা শহর হিসেবে গণ্য হয় এবং আমাদের পরিবার, সন্তান এবং বযস্কদের জন্য হয়ে উঠে এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল।’ বলেন এরিক অ্যাডামস্।