শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

আতঙ্ক কাটেনি বান্দরবানের বাসিন্দাদের, খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র, ফের মর্টারশেলের আঘাত বসতবাড়িতে

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

বান্দরবান: বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মিসহ বিদ্রোহী কয়েকটি গোষ্ঠীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যে কোন কোন সীমান্ত শহর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। আরাকান আর্মির সঙ্গে টিকতে না পেরে এরই মধ্যে গেল দুই দিনে ২৬৪ জন বিজিপির সদস্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিরস্ত্র করে বিজিবি তাদের আশ্রয় দিয়েছে।

এ দিকে, মঙ্গলবারও (৬ ফেব্রুয়ারি) ওপার থেকে এপারে মর্টারশেল, বোমা এসে পড়েছে একাধিক বার।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঘুমধুম বেতবুনিয়া বাজারসংলগ্ন ছৈয়দ নুরের বসতঘরে একটি মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে ঘরটির জানালা ভেঙে গেছে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’

তিনি আরো জানান, রাতভর সীমান্তের মধ্যে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছি। গ্রামবাসীদের মধ্যে খুবই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে সপরিবার নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন।

মর্টারশেল পড়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তির বাসায় মর্টাশেল পড়েছে শুনে আমরা সেখানে গিয়েছি।’

এ দিকে, ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। অনেকে নিজ বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্মীয়ের বাসায় থাকছেন। গ্রামের দোকানগুলোতে তালা ঝুলছে।’

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ তথ্য মতে, ২৬৪ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখানে শুধু বিজিপি সদস্য নন, সেনাবাহিনীর সদস্য, কাস্টমস সদস্য ও আহত মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিক আছেন।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর তিনটায় নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু পয়েন্ট পরির্দশন করে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে যান ডিসি ও পুলিশ সুপার। পরে, মিয়ানমারের ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে নিহত জলপাইতলী এলাকার বাসিন্দা হোসনে আরার পরিবারের সাথে কথা বলেন ও সমবেদনা জানান ডিসি। সেই সাথে প্রশাসনে পক্ষ থেকে হোসনে আরার পরিবারকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন।

পরির্দশন শেষে সার্বিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন জেলার প্রশাসক।

জেলার প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরে জনগণকে অনুরোধ করছি নিরাপদে আশ্রয়ে আসার জন্য। সকলে যেন কয়েকটা দিন নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে এটা আমার অনুরোধ। তবে, এখনো পর্যন্ত কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে যায়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে কয়েক দিন পূর্বে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে।’

বান্দরবানের জেলার পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, ‘আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করছি। কোন ধরনের অনুপ্রবেশ যেন ঘটতে না পারে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। এলাকার লোকরা যাতে আতঙ্কিত না হয়, এ জন্য আমরা সকলকে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক আছে বলে বার্তা দিচ্ছি।’

কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে গেল বছর থেকে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সাথে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) যুদ্ধ চলছে। মাঝে কিছু দিন উত্তেজনা কমে এলেও সপ্তাহ ধরে ফের দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হচ্ছে। দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির সময় মাঝেমধ্যে মর্টারশেল ও গুলি বাংলাদেশে এসে পড়ছে।

মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও বিদ্রোহীদের চলমান সংঘর্ষের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশেও। এ নিয়ে সীমান্তের পাশে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।