শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

আফগানিস্তানকে হারিয়ে সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ

সোমবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

লাহোর, পাকিস্তান: মেইক শিপ্ট ওপেনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া সেঞ্চুরির পর বোলারদের নৈপুণ্যে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের আশা বাঁচিয়ে রাখল বাংলাদেশ। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৮৯ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে আফগানিস্তানকে। এই জয়ে দুই ম্যাচে দুই পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকল বাংলাদেশ। এক খেলায় দুই পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষে আছে শ্রীলংকা। প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে পাঁচ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর গ্রুপের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে শ্রীলংকা ও আফগানিস্তান। ঐ ম্যাচের ফলাফলের পর চুড়ান্ত হবে টুর্নামেন্টের সুপার ফোর।

পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের একাদশ থেকে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ওপেনার হিসেবে অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান তামিম বাদ পড়ায় মেইক শিপ্ট ওপেনার হিসেবে শুরুতে নামেন মিরাজ। তার সাথে ছিলেন মোহাম্মদ নাইম। মিরাজ-নাইম উদ্বোধনী জুটিতে দশ ওভারে ৬০ রান পায় বাংলাদেশ। ওভারের শেষ বলে স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হওয়ার আগে পাঁচটি চারে ৩২ বলে ২৮ রান করেন নাইম। নাইমের বিদায়ে ব্যাটিংয়ে প্রমোশন পেয়ে তিন নম্বরে নামেন ইনফর্ম তাওহিদ হৃদয়। রানের খাতা খোলার আগেই পেসার গুলবাদিন নাইবের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন হৃদয়। চার বলের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে হঠাৎ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে, দলকে চাপমুক্ত করতে আফগানিস্তানের বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন মিরাজ ও চার নম্বরে নামা শান্ত। ২০তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১০০ পার করেন তারা। ২৪তম ওভারে ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ৬৫ বল খেলা মিরাজ। ৩১তম ওভারে ছক্কা দিয়ে ওয়ানডেতে পঞ্চম অর্ধশতক করেন শান্ত। এই জন্য ৫৭ বল খেলেন তিনি। শান্তর একটি ছক্কা ও দুটি চারে পেসার ফজলহক ফারুকির করা ৩৩তম ওভারে ১৭ রান পায় বাংলাদেশ। ৩৫তম ওভারে দলীয় রান ২০০তে পৌঁছায় টাইগাররা।
৪১তম ওভারে ৭৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মিরাজ। ১১৫ বলে শতক পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় বারের মত ওপেনার হিসেবে নামা মিরাজ। সেঞ্চুরির পর আঙুলে ক্র্যাম্প হওয়ার কারণে ৪৩তম ওভারে আহত অবসর নেন সাতটি চার ও তিনটি ছক্কায় ১১৯ বলে ১১২ রান করা মিরাজ। তৃতীয় উইকেটে শান্তর সাথে ১৯০ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৯৪ রান তুলেন মিরাজ। সব মিলিয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে এই জুটির রান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। এর আগেরটি ২০১০ সালে ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬০ রান করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিক। মিরাজ ফেরার ওভারে ২৯ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১০১ বলে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। পঞ্চম বারের মত বাংলাদেশের পক্ষে একই ইনিংসে দুই ব্যাটার সেঞ্চুরি করলেন। অবশ্য, সেঞ্চুরির পরই রান আউট হওয়া শান্ত নয়টি চার ও দটি ছক্কায় ১০৫ বলে ১০৪ রান করেন।

শান্তর পর রান আউট হন মুশফিকও। একটি করে চার-ছক্কায় ১৫ বলে ২৫ রান করেন মুশফিক। মুশফিকের বিদায়ে উইকেটে আসেন অভিষিক্ত শামীম হোসেন। ওয়ানডেতে নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন শামীম। বোলার গুলবাদিনকে ছক্কা মেরে দলের রান ৩০০ রান পার করেন শামীম। ৪৯তম ওভারে শামীম রান আউট হলেও সাকিবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ৩৩৪ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষ দশ ওভারে ১০৩ রান পায় টাইগাররা। ওয়ানডেতে এটি তৃতীয় ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় রান বাংলাদেশের। পাশাপাশি, এশিয়া কাপের মঞ্চে এটিই সর্বোচ্চ রান টাইগারদের। চারটি চার ও একটি ছক্কায় ১৮ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন সাকিব। শামীম করেন ছয় বলে ১১ রান। আফিফ হোসেন অপরাজিত চার রান করেন। আফগানিস্তানের মুজিব ও গুলবাদিন একটি করে উইকেট নেন।

জয়ের জন্য আফগানিস্তানের সামনে টার্গেট ৩৩৫ রান। পরিসংখ্যান বলছে, ‘নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে কখনো ৩০০ বা তার বেশি রান তাড়া করে ম্যাচ জিততে পারেনি আফগানরা। ইতিহাসকে ভুল প্রমাণের লক্ষ্যে খেলতে নামা আফগানিস্তান দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায়। পেসার শরিফুল ইসলামের বলে লেগ বিফোর আউট হন এক রান করা ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। শুরুর ধাক্কা সামলে দ্বিতীয় উইকেটে ৯৭ বলে ৭৮ রান তুলেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও রহমত শাহ। এই জুটি ভেঙ্গে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন তাসকিন। ৩৩ রান করা রহমতকে সরাসরি বোল্ড আউট করেন তাসকিন। তৃতীয় উইকেটে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন ইব্রাহিম ও অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদি। হাফ-সেঞ্চুরি জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। হাসানের বলে মুশফিকের দুর্দান্ত ক্যাচ ফিরেন ওয়ানডেতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি করা ইব্রাহিম। দশটি চার ও একটি ছক্কায় ৭৪ বলে ৭৫ রান করেন তিনি। এরপর নাজিবুল্লাহ জাদরানকে নিয়ে মারমুখী ব্যাটিং শুরু করেন শাহিদি। উইকেট সেট হয়ে জুটিতে দ্রুত হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তারা। এই জুটি ভাঙ্গতে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বোলার ব্যবহার করেন দলপতি সাকিব। অবশেষে, ৩৭তম ওভারের প্রথম বলে নাজিবুল্লাহকে (১৭) বোল্ড করে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরার পথ দেখান মিরাজ। ৫২ বলে ৬২ রান যোগ করেন শাহিদি ও নাজিবুল্লাহ। মিরাজের আঘাতের পর আফগানিস্তানকে লড়াইয়ে থেকে ছিটকে দেন শরিফুল ও তাসকিন। ১৮ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে নেন তারা। শাহিদিকে ৫১ ও গুলবাদিনকে ১৫ শিকার করেন শরিফুল। তিন রানে তাসকিনের শিকার হন নবি। ২১৪ রানে সপ্তম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। শেষ পর্যন্ত ৪৪ দশমিক তিন ওভারে ২৪৫ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশের তাসকিন ৪৪ রানে চার উইকেট নেন। এছাড়া, শরিফুল তিনটি, হাসান ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন।