ঢাকা: তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসরের ইস্যুকে একপাশে রেখে, শনিবার (৭ জুলাই) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ী হয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সমতা আনতে চায় বাংলাদেশ।
বৃষ্টি আইনে প্রথম ওয়ানডে হেরে যাওয়ায় দ্বিতীয়টি বাংলাদেশের সামনে ‘মরা বাঁচার লড়াই’ ম্যাচে পরিণত হয়েছে। এ ম্যাচে হেরে গেলে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যাবে টাইগারদের।
ঘরের মাঠে দ্বিপাক্ষীক সিরিজে দুর্দান্ত রেকর্ড ও আসন্ন বিশ্বকা বিবেচনায় আফগানিস্তানের কাছে সিরিজ হার বড় ধাক্কা বয়ে আনবে বাংলাদেশের জন্য। ২০১৫ সাল থেকে ঘরের মাঠে মাত্র দুটি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। দুই বারই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারে টাইগাররা। কিন্তু, রেকর্ডটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বিশেষ করে অধিনায়ক তামিম ইকবালের হঠাৎ অবসর শুধুমাত্র ক্রিকেট জগতকে অবাক করেনি, খেলোয়াড়দেরও অনেক বেশি আবেগপ্রবণ করেছে।
বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মতে, সিরিজের মাঝে অধিনায়কের হঠাৎ অবসর সব সময়ই মানসিক চাপ। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা কিভাবে এ চাপকে কাটিয়ে উঠতে পারে।
মূলত ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে প্রথম ম্যাচ হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কারণে দৈর্ঘ্য কমে আসা ম্যাচে ৪৩ ওভারের নয় উইকেটে ১৬৯ রান করে বাংলাদেশ। তামিমসহ বেশিরভাগ ব্যাটাররা খারাপ শট খেলে নিজেদের বিপদ ডেকে আনেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে মাত্র ১৩ রান করেন তামিম।
বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে রেকর্ড ৫৪৬ রানে হারা আফগানিস্তান বৃষ্টি ইস্যুকে মাথায় রেখে পরিকল্পনামাফিক ক্রিকেট খেলেছে। উইকেট না হারানোর দিকে মনোযোগী ছিলো আফগানরা। বৃষ্টিতে ম্যাচটি ভেস্তে যাবার আগে ২১ দশমিক চার ওভারে দুই উইকেটে ৮৩ রান করে তারা। বৃষ্টি আইনে ১৭ রানে এগিয়ে ছিল আফগানরা।
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয় ও তামিমের অবসরের ইস্যুর পর বাংলাদেশ ঘুড়ে দাঁড়াতে পারে কি-না; এটাই এখন দেখার বিষয়।
প্রথম ম্যাচের হারের পরও তামিমের অধিনায়ক থাকাকালীন আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছিল, তরুণ ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়কে।
তার মতে, প্রথম ম্যাচের হার শুধুমাত্র একটি ঘটনা। ঘুড়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারে দল আত্মবিশ্বাসী।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা শক্তভাবে ঘুড়ে দাঁড়াতে পারব। আমি মনে করি, প্রথম ওয়ানডেতে আমরা কিছু ভুল করেছি ও আমরা যদি ভুলগুলো শুধরে নিতে পারি, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে জিততে না পারার কোন কারণ নেই।’
হৃদয় আরো বলেন, ‘আমি মনে করি না উইকেট খুব কঠিন ছিল। কিন্তু, শুরুতে বল নীচু হয়ে আসছিল, এটি একটি সমস্যা ছিল ও দুই ধরনের বাউন্স ছিল। আমরা যদি ব্যাট হাতে আরো ভাল করতে পারতাম, তাহলে ম্যাচের চিত্র ভিন্ন হত। সব মিলিয়ে আমাদের ব্যাটিং ভাল হয়নি।’
তামিমের অবসরে দলে পরিবর্তন এসেছে। ইতিমধ্যেই তামিমের জায়গায় রনি তালুকদারকে দলে নিয়েছে বাংলাদেশ ও সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিবেন সহ-অধিনায়ক লিটন দাস।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) মধ্যরাতে বিসিবির জরুরি বৈঠকে এসব নেয়া হয়। বৈঠকের পর, তামিমকে দ্রুত অবসরের সিদ্বান্ত পূনর্বিবেচনার আহবান বিসিবির সভাপতি।
এ দিকে, দলের স্পিনারদের পারফরমেন্সে খুশি আফগানিস্তান কোচ জোনাথন ট্রট। এক ম্যাচ বাকি রেখে সিরিজ জিততে পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা দল অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছেন তিনি।
ট্রট বলেন, ‘আমি মনে করি, সম্প্রতি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অনেক ভাল করার পর আমাদের এখানে আসাটা ভাল হয়েছে। বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা সব সময়ই কঠিন। টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্বান্ত নেয়ার পর আমাদের পেসাররা নতুন বলে ভাল করতে পারেনি। কিন্তু, পরবর্তী আমাদের স্পিনাররা দারুন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের স্পিনারদের দক্ষতা ফুটে উঠেছে। এমন একটি উইকেটে যেখানে আমরা ভেবেছিলাম, স্পিনের চেয়ে পেস বোলিং ভাল হবে।’
প্রথম ওয়ানডেতে ২৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা পেসার ফজলহক ফারুকি দ্বিতীয় ম্যাচের আগে ফিট হয়ে উঠবেন বলে জানান ট্রট। পেশীর ইনজুরির কারনে আগের ম্যাচে বোলিংয়ে নিজের শেষ দুই ডেলিভারি করতে পারেননি তিনি।
বাংলাদেশ দল: লিটন দাস (অধিনায়ক), রনি তালুকদার, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম, আফিফ হোসেন ও নাইম শেখ।
আফগানিস্তান দল: হাশমতউল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবি, ইকরাম আলিখিল, রশিদ খান, আজমাতউল্লাহ ওমরজাই, মুজিব উর রহমান, ফজলহক ফারুকি, আবদুল রহমান, শহিদুল্লাহ, জিয়াউর উর রহমান, ওয়াফাদার মোমান্দ, মোহাম্মদ সেলিম, সাঈদ শিরজাদ।