শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা নেই

শুক্রবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘এ ধরনের নির্বাচনে জনগণের আস্থা নিশ্চিত করা অসম্ভব।’

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ৭৬টি সুপারিশ করেছে টিআইবি। গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকার বিষয়ে সুপারিশমালা উপস্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টিআইবি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম এবং গবেষণা ও নীতিমালা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশটি উপস্থাপনা করেন টিআইবির গবেষণা সহযোগী কাওসার আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ও পরবর্তী পর্যালোচনার ভিত্তিতে আমাদের ধারণা হয়েছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে আমরা যা বুঝি, তা এবারো পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের ব্যাপার। ভোটের অধিকারভিত্তিক নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করা এবং এই নির্বাচনের ওপর জনআস্থা নিশ্চিত করাও অসম্ভব বলে আমরা মনে করি।’

টিআইবির সুপারিশামালায়ও ব্যাপারটির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

জামান বলেন, ‘অর্ধশতাব্দী ধরে আমরা আসনভিত্তিক সংসদীয় ব্যবস্থার চর্চা করছি। এখন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদীয় ব্যবস্থার চর্চা করার সময় এসেছে। সংসদীয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে প্রয়োজন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ জন্য, নির্বাচনকালীন সরকার এবং অন্যান্য সব অংশীজন বিশেষ করে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত ও দলীয় প্রভাবমুক্ত ভূমিকা প্রয়োজন, যা নিশ্চিত করতে আইনি সংস্কার জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীন, শক্তিশালী ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) সব কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে অন্তর্ভুক্ত যোগ্যতা ও অযোগ্যতার শর্তাবলি যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতে অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক গণশুনানি; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (সংশোধনী) ২০২৩ এর ৯১ (এ) সংশোধনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সংসদীয় আসনের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতা রহিত করার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সংকুচিত করার এই ধারা পরিবর্তন, প্রতিযোগিতার সমান ক্ষেত্র (লেভেল প্লেইং ফিল্ড) নিশ্চিতে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের নির্বাচনকেন্দ্রিক আচরণ বিধি সুস্পষ্ট করা এবং সব দল ও প্রার্থীর প্রচারণার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে ‘না’ ভোটের পুনঃপ্রচলনের সুপারিশ করেছে টিআইবি।’

রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চা রাজনৈতিক দলের সব প্রকার গৃহীত অনুদান, আয়-ব্যয়, বিশেষ কার্যক্রমভিত্তিক সংগৃহীত অর্থ ও ব্যয়, প্রচারণাসহ নির্বাচনী ব্যয়, মনোনয়ন কেন্দ্রিক আর্থিক লেনদেন প্রাতিষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার; রাজনৈতিক দলসমূহের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দেয়া ও নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা; রাজনৈতিক দলগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে দলের কেন্দ্রীয়/নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সম্পদের হিসাব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা; সব রাজনৈতিক দলের কমিটিতে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচনে ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্যকে মনোনয়ন দেয়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে টিআইবি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে জেন্ডার, ধর্মীয়, নৃতাত্ত্বিক, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ও অন্যান্য মাপকাঠিতে প্রান্তিকতার শিকার নাগরিকদের যথাযথ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।’

টিআইবির সুপারিশমালায় বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, প্রশাসনিক কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিচার বিভাগের নিজস্ব সচিবালয় স্থাপন, অধস্তন আদালতের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলিসহ সার্বিক নিয়ন্ত্রণ ও তত্তাবধান এককভাবে সুপ্রিম কোর্টের সচিবালয়ের ওপর ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

টিআইবির প্রণীত সুপারিমালায় নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্য অধিকার, তথ্য ও উপাত্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

এছাড়া, আর্থিক খাত ও সরকারি ব্যয়ে সুশাসন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সুস্পষ্ট সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। গণমাধ্যম, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিতে এদের পরিপন্থী আইন সংস্কার ও নজরদারিমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে সরে এসে সরকারকে গণমাধ্যম ও নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে টিআইবির পক্ষ থেকে।