গাজা উপত্যকা, ফিলিস্তিনি অঞ্চল: অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ এক বছর ধরে ইসরাইলের বর্বরতায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে আছে নারী ও শিশুরা। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা নানা জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসার অভাবের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ভুগছেন লাখো নারী ও শিশু। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজাবাসীর জীবনে যে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে, তার অবসান হয়নি এখনো। বারুদের গন্ধে ভারী হয়ে আছে গাজার আকাশ।
এক বছর ধরে চলমান এ যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার। তবে, যারা প্রাণে বেঁচে গেছেন, তাদের দুর্ভোগের যেন কোন শেষ নেই। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অবরুদ্ধ এ অঞ্চলটি। এরই মধ্যে শিশুদের জন্য গাজা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় প্রায় ৫০ হাজার নারী অন্ত্বঃসত্ত্বা ছিলেন। এদের মধ্যে ১৫ শতাংশ নারী নানা ধরনের জটিলতায় ভুগছেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম।
ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হ্যারি জনসন বলেন, ‘গাজার অন্তঃসত্ত্বা নারীরা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্ত চাপের মত সমস্যায় ভুগছেন। যা এ অবস্থায় স্বাভাবিক। তবে, চিকিৎসা নেয়া না হলে সন্তান জন্মদানে এ সমস্যাগুলো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়া, অপরিষ্কার পরিবেশে বসবাস, অপর্যাপ্ত খাদ্য ও মানসিক চাপও অঞ্চলটির সন্তানসম্ভাবা নারীদের স্বাস্থ্যগত জটিলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। এছাড়াও, যে সব নারী হরমোনের সমস্যা ভুগছিলেন, তাদের মাঝপথে চিকিৎসা থেমে যাওয়ায় পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
যুদ্ধের শুরুর দিকেই গাজায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় নেতানিয়াহুর সৈন্যরা। এতে, হাসপাতালের ইনকিউবেটরগুলো চালানো অসম্ভব হয়ে পরে। যা নবজাতক শিশুদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। প্রাণহানির শঙ্কা ছাড়াও চলমান এ যুদ্ধের দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব পড়তে যাচ্ছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর।
ফিলিস্তিনি মনরোগ বিশেষজ্ঞ ইমাম ফারাজাল্লাহর গবেষণা বলছে, ‘যুদ্ধে বেড়ে ওঠা শিশুরা পরবর্তী নানা রকমের মানসিক সমস্যায় ভোগে। অস্থিরতা, বদমেজাজ ও হিংসাত্মক ব্যবহার দেখা যায় তাদের মধ্যে।
বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয়রতদের সাথে কথা বলেও এর সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। বেশিরভাগ পিতা-মাতা জানান, তাদের সন্তান পুরো দিন ভয়ে অস্থির থাকে, হুট করে রেগে যায়। আচার-আচরণে অস্থিরতাও লক্ষ্য করেন তারা। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে শিশুরা।
এরমধ্যেই খাদ্য সংকট আরো মানবেতর করে তুলেছে পরিস্থিতি। বাড়ন্ত শিশু ও নারীদের পুষ্টিকর খাদ্য প্রয়োজন। ইসরাইলের আগ্রাসনে গাজায় এটা অনেকটা আকাশ কুসুম কল্পনার মত। এ অবস্থায়, শিশুরা যেমন পুষ্টির অভাবে বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে, তেমনি প্রভাব পড়ছে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপরেও।
এ যুদ্ধ শেষে যারা প্রাণে বেঁচে যাবেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যে অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে, তার প্রভাব দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের বয়ে বেড়াতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।