ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: ইসরাইলে হামলার বিষয়ে ইরানকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে জো বাইডেন প্রশাসন তেহরানকে বলেছে, ‘ইরান যদি পাল্টা হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে আর আটকাতে পারবে না।’ সংবাদ অ্যাক্সিওসের।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা ইরানিদের বলেছি, এবার আর আমরা ইসরাইলকে সামলাতে পারব না এবং আমরা এটা নিশ্চিত করতে পারব না যে, পরবর্তী হামলা কোথায় কিভাবে চালানো হবে।’
বার্তাটি সরাসরি ইরানিদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। তবে, ইসরাইলি সূত্র বলেছে যে, বার্তাটি সুইস মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তেহরানে পাঠানো হয়েছে। তবে, হোয়াইট হাউস এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গাজা ও লেবানন যুদ্ধের মধ্যে গেল এপ্রিল থেকে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গেল ১ অক্টোবর ইসরাইলে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ওই হামলা চালানো হয়।
এর উত্তরে গেল ২৬ অক্টোবর ইরানে আচমকা হামলা চালায় ইসরাইলের বাহিনী। এই হামলায় রাজধানী তেহরানসহ দেশটির কয়েকটি প্রদেশের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এই হামলায় ইসরাইলের বাহিনী শতাধিক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে।
হামলার পর ইসরাইলের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলা না চালাতে ইরানকে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। তাদের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যও ইরানকে পাল্টা হামলা না চালানোর আহ্বান জানায়। তবে. সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরাইলে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’
টাইমস অব ইসরাইল গেল বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) জানিয়েছে, আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগে হামলা চালাবে না ইরান।’ তবে অন্য কিছু সংবাদ মাধ্যম সূত্রের বরাত দিয়ে বলছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পূর্বেই ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে ইরান।’
শনিবার (২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে আরও এক বার হুঁশিয়ারি দেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা। এ দিন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘শত্রু সে জায়নিস্ট ইসরাইলি সরকার হোক আর যুক্তরাষ্ট্র হোক, ইরান, ইরানি জনগণ ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর সাথে যা করা হচ্ছে, তার জন্য নিশ্চিতভাবেই দাঁতভাঙা উত্তর পাবে।’
খামেনি আরও বলেন, ‘এটা শুধু প্রতিশোধের বিষয় নয়, যুক্তিসংঘত পদক্ষেপ। যা ধর্ম, নীতি, শরীয়া ও আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সম্পর্কিত। তবে কবে, কখন কি মাত্রায় এই উত্তর দেয়া হবে, তা বিস্তারিত উল্লেখ করেননি ৮৫ বছর বয়সি এই নেতা।
খামেনি আরও বলেন, ‘অহংকারী শক্তিগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য ইরানি জাতিকে প্রস্তুত করতে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় সবকিছু করব। সেটা সামরিকভাবে হোক, অস্ত্রশস্ত্রের দিক থেকে হোক বা রাজনৈতিকভাবে হোক। আমাদের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কাজ করছেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ইসলামি শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ ইরানি জাতির জন্য কর্তব্য। অহংকারের মোকাবিলা করা কর্তব্য। অহংকার মানে হল- ব্যাপক অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও জাতিকে অবমাননা করা।’
ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ দিনের শত্রুতার কথা উল্লেখ করে খামেনি বলেন, ‘তথ্য বিকৃত করা ঐতিহাসিকরা দাবি করার চেষ্টা করছে যে, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ৪ নভেম্বর। এটা মিথ্যা কথা। মার্কিনীরা বিপ্লবের আগে থেকেই ইরানি জাতির সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল।’