ঢাকা: বিদেশে প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার অভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (২৩ জুন) দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করেছেন।’
দেশব্যাপী দলের কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। এর পূর্বে শনিবার (২২ জুন) রাতে দলের সব মহানগর ও জেলা ইউনিটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে রোববার দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের নেতা খালেদা জিয়া কোন (প্রয়োজনীয়) চিকিৎসা (বিদেশে) না পেয়ে মৃত্যুশয্যায় সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন।’
তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান ‘জালিম ফ্যাসিবাদী’ সরকারের প্রতিহিংসার কারণে বিএনপির চেয়ারপারসন দীর্ঘ দিন কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
ফখরুল বলেন, ‘সম্পূর্ণ বানোয়াট মামলায় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে বাড়িতে থাকতে দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ও বন্দি রয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু, সেখানে তার কোন চিকিৎসা করা হয়নি।’
বিএনপির নেতা বলেন, ‘তিনি বার বার অভিযোগ করলেও সরকার কর্ণপাত করেনি ও চিকিৎসা সেবা দেয়নি। পরে যখন তাকে (কারা কর্তৃপক্ষ) হাসপাতালে পাঠায়, সেখানেও তার কোন সুচিকিৎসা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে গুলশানে তার বাসায় থাকার অনুমতি দিয়েছে এ শর্তে যে, তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না ও অবশ্যই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিতে হবে।’
ফখরুল বলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বার বার বলে আসছে, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) অসুস্থতার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। তার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য উন্নত দেশের একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিদেশি মিশন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বিদেশে বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধায় তার চিকিৎসার অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে অব্যাহতভাবে আবেদন করেছে।’
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, ‘কিন্তু শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে খুন ও রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন।’
শনিবার (২২ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে গুলশানের নিজ বাসভবন ‘ফিরোজা’য় আচানক অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়।
৭৯ বছর বয়সী প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট ও চোখের সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছেন। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েক বার হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। ২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ার পর থেকে তার চিকিৎসকরা তাকে বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। গেল ২৬ অক্টোবর খালেদা জিয়ার পেট ও বুকে পানি জমে যাওয়া এবং লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগুলার ইন্ট্রাহেপ্যাটিক পোর্টোসিস্টেমিক শান্ট (টিপস প্রসিডিউর) নামে পরিচিত হেপাটিক অপারেশন সম্পন্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।