স্টোকহোম, সুইডেন: মুসলমাদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়ানো ও তার জেরে মুসলিম পৃথিবীতে সৃষ্ট ক্ষোভের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার এক ব্যক্তিকে ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহ ও খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে সুইডেনের পুলিশ। খবর এপির।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) এক ব্যক্তি এ দিন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোম পুলিশ বরাবর তোরাহ ও বাইবেল পোড়ানোর আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি বলেন, ‘গেল মাসে স্টকহোম কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় তিনি ও তার বন্ধুরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (১৫ জুলাই) তিনি ও তার বন্ধুরা ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে তোরাহ ও বাইবেল পোড়াতে চান।
স্টকহোম পুলিশ এ আবেদন অনুমোদন করেছে। তবে, শর্ত দিয়েছে- এ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আবেদনকারী তার সাথে সর্বোচ্চ দুই জন সঙ্গী রাখতে পারবেন।
গেল ২৯ জুন স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে প্রতিবাদ মিছিলে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। এ কাজ যিনি করেছিলেন, তিনি একজন ইরাকি মুসলিম ও শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে গিয়ে সেখানকার নাগরিকত্ব নিয়েছিলেন।
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশসহ মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি)। মুসলিম পৃথিবীর উদ্যোগে গেল ১২ জুলাই এ বিষয়ক একটি প্রতিবাদ প্রস্তাব (রেজোল্যুশন) পাস করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। পরিষদের ৪৭টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ২৮টি সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোটও দিয়েছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ প্রস্তাবের সমালোচনা করে বিপক্ষে ভোট দিয়েছে।
বলে রাখা ভাল, পশ্চিম ইউরোপের অধিকাংশ উন্নত দেশের মত সুইডেনের সংবিধানে জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ১৯৭০ সালে ব্লাসফেমি আইন বাতিল হয়েছে সুইডেনে ও দেশটির রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ জনসমাবেশকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চেয়ে স্টকহোম পুলিশ বরাবর ইমেইল করেছিল এপি। জবাবে পাল্টা ইমেইলে স্টকহোম পুলিশ জানিয়েছে, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি ও বলেছি কোন প্রকার সহিংসতা করা যাবে না।’
এ দিকে, স্টকহোম পুলিশকে এ অনুমোদন প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিতে সুইডেনের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ইসাক হেরজগ। বিবৃতিতে হেরজগ বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআন পোড়ানোর ঘটনার নিন্দা জানিয়েছি। এখন আমাদের ধর্মগ্রন্থ তোরাহ পোড়ানোর অনুমোদন দেয়ার তথ্য জানতে পেরে আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।’