বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

এমন শিক্ষক সম্মানিত হলে জিতে যাই আমি

সোমবার, মার্চ ২৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

অভ্র বড়ুয়া: কিছু শিক্ষক আছেন, যারা সত্যিকার অর্থে অসাধারণ। জীবন যেভাবে আমরা প্রতি মুহূর্তে উদযাপন করি, পড়াশোনাটাকেও যে সেভাবে উদযাপন করা যায়, তা এমন শিক্ষকের সংস্পর্শে না আসলে অনুভব করা যাবে না। আজ এমন এক শিক্ষকের গল্প শোনাব, যে শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে বসে অনায়াসে একজন শিক্ষার্থীকে পৃথিবীর যে কোন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে উপভোগ করাতে পারেন। যার শিক্ষা আত্মার গভীরে অনুরণিত হয়। পাঠ্য পুস্তকের গণ্ডি পেরিয়ে, তিনি বিস্তৃত বিষয়গুলির পরিমণ্ডলে অনুসন্ধান করেন, প্রতিটি পাঠকে প্রাসঙ্গিকতার সাথে তুলে ধরেন। তিনি শুধু আমার শিক্ষকই নন, একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বও বটে আমার জীবনে। বলছি ভারতের কালিম্পংয়ে জন্ম নেয়া গুণী শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডামের কথা। আমি দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের স্কুলে আজ প্রায় পাঁচ বছর এবং এখানে আমার বিদ্যালয় জীবনের ইতি টানার শেষ মুহূর্তে এ গুণী মানুষটির কথা তুলে না ধরলেই নয়। শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডামকে যা আলাদা করে, তা হল জীবনের সুতো দিয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত জীবনের সফলতার বুনন বুনতে তার সহজাত ক্ষমতা। তার শিক্ষার মাধ্যমে, বিষয়গুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে, কল্পনাকে চিত্তাকর্ষক করে এবং জ্ঞানের জন্য অদ্ভুত এক তৃষ্ণা জাগায়।

দিনের শেষে যেমন সন্ধ্যা নামে, ঠিক তেমনি তিনি অন্য রকম এক রূপে ফেরেন আমাদের বোর্ডিং স্কুলে। কখনও সাক্ষাৎ মা, কখনও পরম মায়ায় যত্ন নেয়া বোন, কখনও বা পরম বন্ধু। বাড়ির অনুপস্থিতিতে, তিনি পরিচিতির আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠেন, তার সান্ত্বনাদায়ক উপস্থিতি; যা উষ্ণতা এবং আত্মীয়তার অনুভূতি জাগিয়ে তোলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অনুভূতিতে। শিক্ষার্থীদের প্রতি তার নিবেদিত প্রাণ গুণটি শ্রেণী কক্ষের বাইরেও সমানভাবে প্রসারিত। তিনি শুধুমাত্র একজন ছাত্রের সফলতা নয়, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শিক্ষার্থীদের প্রতি যার সহানুভূতি চোখে পড়ার মত। তার মধ্যে, শিক্ষার্থীরা কেবল একজন শিক্ষককে নয়, একজন পরামর্শদাতা সর্বোপরি একজন আর্দশবান মানুষকে খুঁজে পায়।

খুব বেশি দিন নয়, আমার শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম ভারতের অন্যতম স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইন্সপিরিয়া কর্তৃক ‌‍‘গুরু সম্মান পুরষ্কার’-এ ভূষিত হন। যে স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন, তা কেবল তার শিক্ষাদানের দক্ষতার প্রমাণ নয়, বরং তার শিক্ষার্থীদের সাফল্যের প্রতি তার অটল প্রতিশ্রুতির এক সফল গল্পের আখ্যান। পর্দার আড়ালে অক্লান্ত পরিশ্রম করা সত্বেও, তার প্রভাব প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবন জুড়ে প্রতিফলিত হয়, ভবিষ্যত প্রজন্মেকে সত্যিকার অর্থে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আমি সৌভাগ্যবান যে, আমার যে কোন সিদ্ধান্তে তার দিকনির্দেশনা পেয়েছি। আমাদের জন্য, শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম শুধু একজন শিক্ষাবিদ নয়; আলোর বাতিঘর। তার শিক্ষাদান কেবল জ্ঞানই নয়, আমাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলে।

এমন শিক্ষক যথন সম্মানিত হয়, তখন জিতে যাই আমি। শিক্ষক সন্দীপা ম্যাডাম ছাত্রদের জীবনে একজন শিক্ষকের গভীর প্রভাবের অনুস্মারক হিসেবে কাজ করে। তিনি শিক্ষার প্রকৃত সারমর্মের উদাহরণ দেন- শুধু জ্ঞান প্রদানই নয়, কৌতূহলের শিখা জ্বালিয়ে নতুন উচ্চতায় ওঠার জন্য আত্মাকে লালন করা। শুধু আমার নয়, হাজারো শিক্ষার্থীর স্বপ্নের স্থপতি সন্দীপা ম্যাডামকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

শিক্ষক শব্দটা ছোট হতে পারে,কিন্তু এর ব্যাপকতা যে কোন কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। একজন আর্দশ শিক্ষক, আদর্শ জাতির পরিচয় সৃষ্টি করেন। আসুন সন্দীপা ম্যাডামের মত এমন আর্দশ শিক্ষকদের ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। ভাল থাকুক আমার শিক্ষক।

লেখক: শিক্ষার্থী, দার্জিলিং, ভারত।