/ 
প্রিন্ট করুন
ডেস্ক প্রতিবেদন: ঘাম ঝরানো গরমকাল চলছে, সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রার তীব্রতা। আর এ কারণেই এখন প্রতিটি বাড়িতে এসির মত হোম অ্যাপ্লায়েন্স খুব জরুরি হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নানা রকম এসিতে এখন বাজার সয়লাব। এসবের মধ্য থেকে নিজের ঘরের জন্য সঠিক এসি বাছাই করা অনেক সময় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবে, এসি কেনার আগে মাত্র ছয়টি বিষয় মাথায় রাখলে এ কাজটি হয়ে যাবে একদম সহজ।
রুমের আকার: যে রুমে এসি লাগানো হবে, এর আকারের ওপর নির্ভর করে সঠিক আকারের এসি বাছাই করতে হবে। রুমের তুলনায় ছোট হবে- এমন এসি কিনলে তা ঘর ঠিকভাবে ঠান্ডা করতে পারবে না। অপর দিকে, রুমের তুলনায় বড় হবে- এমন এসি কিনলে তা বেশি বিদ্যুৎ খরচ করবে ও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সাধারণত এসি এক, দেড় বা দুই টন আকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে ১২০ বর্গফুট রুমের জন্য এক টন, ১৮০ বর্গফুট রুমের জন্য দেড় টন ও ২৪০ বর্গফুট রুমের জন্য দুই টন এসি যথার্থ। যাই হোক, রুমের আকার জানা থাকার পাশাপাশি, জানালার আকার, রুমে সূর্যের আলো কতটুকু ঢুকতে পারে, সিলিংয়ের উচ্চতা, এসব বিষয়েও খেয়াল রাখা জরুরি। রুম সম্পর্কে এসব খুঁটিনাটি জেনে নেয়ার পর এসি বিক্রেতা বা প্রফেশনাল কারো সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।
এসির ধরন ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়: বাসাবাড়িতে সাধারণত দুই ধরনের এসি ব্যবহার করা হয়- ‘উইন্ডো’ ও ‘স্প্লিট’। স্প্লিট এসির কম্প্রেসর আবার নন-ইনভার্টার ও ইনভার্টার দুই ধরনের হয়ে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধার কথা বিবেচনা করে ইনভার্টার প্রযুক্তি-নির্ভর এসিগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় জনপ্রিয় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের ইনভার্টার কম্প্রেসর ৫০-৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে সক্ষম। একই সাথে, এ ধরনের এসি পরিবেশ-বান্ধব হয় ও অতিরিক্ত খরচ বাঁচাতে সাহায্য করে। এসি কেনার ক্ষেত্রে সিজনাল এনার্জি এফিশিয়েন্সি রেশিও (এসইইআর) রেটিং বেশি আছে কিনা দেখে নেয়া জরুরি। এ রেটিংয়ের মাধ্যমে সারা বছর এসি পরিচালনায় কতটুকু বিদ্যুৎ ও টাকা খরচ হবে, তা জানা যায়। এসইইআর রেটিং ভাল থাকার মানেই হচ্ছে- এসি দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে ও অতিরিক্ত খরচ হবে না।
এসির দাম: এসি কেনার ক্ষেত্রে এর দাম অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই আপনার বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। এরপর দোকানে গিয়ে দেখতে হবে, আপনারে বাজেটের মধ্যে সবচেয়ে ভাল এসি কোনটি। সাধারণত ৪০ হাজার টাকা থেকে নন-ইনভার্টার এসির দাম শুরু হয়, আর ইনভার্টার প্রযুক্তি-নির্ভর এসির দাম শুরু হয় ৬০ হাজার টাকা থেকে।
কুলিং স্পিড: আপনি যদি এমন কোন এসি চান, যা রুমকে খুব দ্রুত ঠান্ডা করতে পারবে, তাহলে ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (বিটিইউ) রেটিং বেশি আছে কিনা দেখে নিন। বেশি বিটিইউ-নির্ভর মডেলগুলো রুম খুব দ্রুত ঠান্ডা করতে সক্ষম। পাশাপাশি এগুলো বিদ্যুৎসাশ্রয়ও করে। সম্প্রতি কিছু এসি ব্র্যান্ড রুম দ্রুত ঠান্ডা করতে সক্ষম- এমন প্রযুক্তি এনেছে, যার সাহায্যে বড় ফ্যান, বিস্তৃত ইনলেট ও প্রশস্ত ব্লেডের মাধ্যমে ৩০-৪০ শতাংশ দ্রুত সময়ে রুম ঠান্ডা করা যায়।
এসি ইনস্টল ও রক্ষণাবেক্ষণ করা: প্রফেশনাল টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে এসি ইনস্টল করা উচিত। ঠিকভাবে ইনস্টল না করা হলে, তা এসির পারফর্ম্যান্সের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করতে পারে; পাশাপাশি, এতে করে বিদ্যুতের খরচ বেড়ে যেতে পারে ও ঘরের নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠত পারে। এছাড়া, এসি ভালভাবে কর্মক্ষম রাখতে এর রক্ষণাবেক্ষণের সময় সম্পর্কে জানতে হবে। এসি ব্র্যান্ডের বিক্রি পরবর্তী সেবা সম্পর্কেও বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। ঠিকভাবে ইনস্টল আর রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে এসি সারা জীবন সেবা দিয়ে যেতে পারবে। আর এ জন্য, দক্ষ টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে এসি ইনস্টল করা প্রয়োজন।
এসির ফিচার: প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনের এ যুগে পারফর্ম্যান্স ও গ্রাহক-অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করতে নিত্য নতুন ফিচার আনা হচ্ছে। রুমে বিশুদ্ধ বাতাস সরবরাহ নিশ্চিতে এসিতে আনা হয়েছে খুব সহজেই পরিস্কার করা যাবে- এমন এয়ার ফিল্টার। এছাড়া, আপনার পছন্দ ও রুচির সাথে মিলে যাবে- এমন এসিও বাজারে আছে। একটি রুম কত দ্রুত ঠান্ডা হবে- তা নির্ভর করে কুলিং স্পিডের ওপর, এটিও এখন এসি কেনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
এসব ফিচার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি, এসি রিমোট কন্ট্রোলের ফাংশনগুলোও দেখে নিতে হবে। উদ্ভাবনী ফাংশন-নির্ভর রিমোট কন্ট্রোল আপনার এসি ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি স্যামসাং এসি রিমোট কন্ট্রোলে এমন ফিচার এনেছে, যেন রুমের বর্তমান তাপমাত্রা ও এসিতে সেট করা তাপমাত্রা- এ দুটিই একসাথে দেখা যায়। রুম ঠিক কত সময়ের মধ্যে ঠান্ডা হচ্ছে, তা এখন খুব সহজেই বোঝা যাবে, আর সর্বোচ্চ আরাম নিশ্চিত করতে এর ওপর নির্ভর করে সেটিংসও পরিবর্তন করা যাবে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে খুব সহজেই এসি কেনা যাবে। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখলে এক দিকে যেমন আপনার প্রয়োজন মিটবে, তেমনি নিশ্চিত করা যাবে আরাম ও প্রশান্তি।
