বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ওবায়দুল হাসান দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি

বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করিয়াছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।’

তিনি হবেন দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি। বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বপালনের মেয়াদ ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।

ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন ছয়াশী (হাটনাইয়া) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন। তার বাবার নাম আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, মায়ের নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন। তার পিতা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশ নেন ও গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে সই করেন। তার অনুজ সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোনা-চার আসনের সাংসদ। সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

ওবায়দুল হাসানের স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন সদস্য (ফিন্যান্স) হিসেবে কর্মরত আছেন। তাদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ শাফকাত হাসান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডারহাম থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (অর্থনীতি) ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ পেয়ে জেলা বার-কমিটিতে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে ও ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারী এটর্নি জেনারেল ও ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগ দেন ও ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে তিনি ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগ দেন ও ২০১২ এর ১৩ ডিসেম্বর এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় দেয়া হয়েছে। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগ দেন ও আর্জেন্টিনান বুয়েন্স আয়ার্সে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও, ২০১৫ সালের আগস্টের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, তৎকালীন যুগোস্লোভিয়ার বিচারকদের সাথে মত বিনিময় সভায় যোগ দেন।

তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ও অন্যান্য’ ও ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ: একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামের দুটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।

এছাড়াও, এর আগে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, ‘১১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অনুপস্থিতিতে বা তার পুনরায় দায়িত্বভার না নেয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনের দায়িত্ব দিয়েছেন।