বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ওয়াটারএইডের ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রোগ্রাম স্ট্রাটেজি ২০২৩-২০২৮’ এর আনুষ্ঠানিক সূচনা

শুক্রবার, আগস্ট ১১, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: দেশের প্রত্যন্ত ও সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিজেদের পাঁচ বছর মেয়াদী ‘কান্ট্রি প্রোগ্রাম স্ট্রাটেজি ২০২৩-২০২৮’ আনুষ্ঠানিকভাবে সূচনা করেছে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ। এ উপলক্ষে বুধবার (৯ আগস্ট) ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বাঢ়ী ভন লিন্ডে, স্থানীয় সরকার বিভাগের পলিসি সাপোর্ট অধিশাখার যুগ্মসচিব এমদাদুল হক চৌধুরী, পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত, ওয়াটারএইড দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম এবং ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার, সুশীল সমাজ ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ওয়াশ সুবিধার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেলেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ছয় (এসডিজি ৬) অর্জনে পর্যাপ্ত সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধার আওতায় আনতে এখনো যথেষ্ট পথ পাড়ি দেয়া বাকি। জলবায়ুগত ঝুঁকি বিবেচনায় বিশ্বে সপ্তম সংকটাপন্ন অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে জলবায়ুগত বিভিন্ন পরিবর্তনের কারণে দেশে পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা খাতে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। তাই, আগামী পাঁচ বছরে নাগরিক ও নীতিনির্ধারকদের আন্তঃসম্পর্ক দৃঢ়তর করে তোলার পাশপাশি প্রাসঙ্গিক ও টেকসই ওয়াশ প্রযুক্তি ও পন্থা প্রণয়নের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে ওয়াটারএইড। দেশের সর্বত্র জলবায়ু সহিষ্ণু উন্নত পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা নিশ্চিত করতে উন্নয়ন অংশীদার সংস্থা, বেসরকারি খাতের সেবাদাতাসহ ওয়াশ-খাত সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সাথে একজোটে কাজ করতে আগ্রহী রয়েছে ওয়াটারএইড।

ওয়াটারএইড বাংলাদেশের এই নতুন কান্ট্রি স্ট্রাটেজী সূচনার প্রয়াসকে স্বাগত জানিয়ে আলেকজান্দ্রা বাঢ়ী ভন লিন্ডে বলেন, ‘নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা নিশ্চিত করতে বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা ওয়াটারএইডের সাথে কাজ করছি। সবার জন্য ব্যবহার উপযোগী ও টেকসই ওয়াশ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ওয়াটারএইডের ভুমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

তিনি সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি ও টেকসই সেবা নিশ্চিতকরণে ওয়াটারএইডকে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে এমদাদুল হক চৌধুরী ওয়াশ সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নীতিমালা ও কৌশলপত্র প্রণয়ন, পরিমার্জন ও হালনাগাদকরণে ওয়াটারএইডের সক্রিয় ভূমিকার প্রশংসা করে স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আগামীতেও সহযোগিতা অব্যাহত রেখে সেক্টরের উন্নয়নে অবদান রাখার আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা নিশ্চিত করতে শুধু পলিসি তৈরি বা সংশোধন করতেই সহায়তা করছে না, মাঠ পর্যায়ে এই পলিসি বাস্তবায়নেও সহযোগিতা করছে।’

আইনুন নিশাত বলেন, ‘নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধার স্থায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এর পরিচালনা পদ্ধতির উপরও জোর দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মাথায় রাখতে হবে। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে পানির প্রাপ্যতা এক দিকে কমতে থাকবে, অন্য দিকে পানির চাহিদা বাড়তে থাকবে।’

তিনি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওয়াটারএইডসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ পরিকল্পনা নেয়ার আহবান জানান।

সমাপনী বক্তব্যে খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সামগ্রিক ওয়াশ পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির তুলনায় উন্নত। কিন্তু, নিরাপদভাবে পরিচালিত (সেইফলি ম্যানেজড) স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও পাইপ লাইনের মাধ্যমে সকলের নিকট উন্নত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছনে রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের জন্য তাই সরকারি-বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে কাজের উদ্যাগ নিতে হবে’।

তিনি প্রাসঙ্গিক ও টেকসই ওয়াশ প্রযুক্তি ও পন্থা প্রণয়নেরে উপর গুরুত্বারোপ করেন ও ওয়াটারএইড বাংলাদেশের নতুন কান্ট্রি প্রোগ্রাম স্ট্রাটেজির সফল বাস্তবায়নে সকলকে সহাযোগিতার আহবান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে হাসিন জাহান জানান, সকলের জন্য জলবায়ু-সহিষ্ণু নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত এসডিজির সার্বজনীন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন আগামীতে আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

পরে, পাঁচ বছর মেয়াদী ‘কান্ট্রি প্রোগ্রাম স্ট্রাটেজি ২০২৩-২০২৮’ উপস্থাপনা করেন ওয়াটারএইডের প্রোগ্রাম ও পলিসি অ্যডভোকেসি ডিরেক্টর পার্থ হেফাজ সেখ।

অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা, শ্রীমঙ্গল, টাঙ্গাইল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের উন্নত ওয়াশ সুবিধা ব্যবহারকারী ও তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা উপস্থিত শ্রোতাদের সাথে তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।