রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ওষুধ ছিটিয়ে মশা কমানো প্রায় অসম্ভব

মঙ্গলবার, এপ্রিল ৯, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

রেজাউল করিম চৌধুরীর: মুসলিম জাহানের সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্র মাস রমজানের সিয়াম সাধনা শেষে দরজায় কড়া নাড়ছে মহাখুশীর ঈদ। রমজান মাস হল রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। তাই, এ মাসে আমরা যারা রোজা রেখে সংযম রক্ষা করে দান ছাওকাত ও সঠিকভাবে নামাজ আদায় ও এবাদত বন্দেগী করতে পেরেছি, তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আল হাদিসে বর্ণিত আছে, রমজান মাসে ছাওয়াবকে দশ গুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যায়। তাই, রমজানের বরকতে অসীম সওয়াব লাভের অধিকারী হওয়ায় সকলকে জানাই অভিনন্দন ও মোবারকবাদ।

ঈদের দিন সকালে ধনী গরীব সকলে মিলে কাতারবদ্ধ হয়ে আমরা ঈদের নামাজ আদায় শেষে পারস্পরিক কোলাকুলি ও করমর্দন করে নিজেদের মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব। তাই, সিটির বিভিন্ন স্থানের ঈদগাহগুলোকে উপযুক্ত করে তুলতে, নামাজীদের জন্য সব প্রকার সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিয়েছে। চসিকের সরাসরি তত্বাবধানে সিটির প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ্ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। এছাড়াও, লালদীঘি চসিকের শাহী জামে মসজিদ, সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ্ মসজিদ, চকবাজার সিটি কপোরেশন জামে মসজিদ, দক্ষিন খুলশী আবাসিকএলাকা জামে মসজিদ, আরেফিন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুর বাজার জামে মসজিদ, জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন মা আয়েশা সিদ্দীকী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে চসিকের তত্বাবধানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া, সিটির ৪১ টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের তত্বাবধানে পৃথক পৃথক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের ঈদের সাথে যুক্ত হচ্ছে বাংলা বর্ষ বরণের আনন্দ। ইংরেজী ১৪ এপ্রিল বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিন। বাংলা বছরের প্রথম দিনটি আমরা বাঙালিরা নববর্ষ হিসেবে পালন করি। এটি আমাদের সার্বজনীন লোকজ উৎসব, প্রাণের উৎসব, আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির শেকড়। অতীতেতর সব ভুল ভ্রান্তি, গ্লানি ও কলুষতাকে পিছনে ফেলে নয়া বছরের নয়া পথচলা হোক সাফল্যভরা। বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ সকলের জীবনে নিয়ে আসুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। বাংলা নববর্ষের প্রথম মাস বৈশাখ জুড়েই গ্রামবাংলায় বসে বৈশাখী মেলা। পহেলা বৈশাখে আমাদের চট্টগ্রাম সিটির সিআরবি শিরিষতলা ও ডিসি হিলসহ নানা স্থানে ১২ বৈশাখ আমাদের চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠে ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলিখেলাকে ঘিরে ১০ তারিখ হতে কোতোয়ালী, লালদীঘি পাড়, আন্দরকিল্লা, সিনেমা প্যালেস এলাকায় বসে লোকজ বৈশাখী মেলা। ঈদ আয়োজনসহ বর্ষবরণ ও বৈশাখী উৎসবকে নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও সাফল্যময় করতে চসিক তৎপর রয়েছে ও সদা সক্রিয় থাকবে। যারা পরিবার পরিজনের সাথে ঈদ ও বর্ষবরণ উৎসব পালনের উদ্দেশ্যে শহরের আবাস ছেড়ে চার পাঁচ দিন কিংবা তারো বেশী সময়ের জন্য গ্রামের বাড়ীতে পাড়ি জমাবেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যাতে বাসা বাড়ীতে জমানো পানি রাখা না হয়। পানি ধরে রাখার ড্রাম, বালতি, গামলা বা যে কোন পাত্র যেন খালি করে উপুড় করে রেখে যেতে হবে। কেননা, জমানো পানিতে এডিস মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। এতে করে গ্রামের বাড়ী থেকে ফিরে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ার আশংকা থাকে। কেবল এডিশ মশাই নয়, যে কোন মশার উপদ্রব কমাতে আমাদের সকলেরই বিশেষ সচেতনতা ও সতর্কতা প্রয়োজন। নগরবাসী সচেতন না হলে মশার উপদ্রব কমানো কঠিন হবে। নগরে মশার উপদ্রব কমাতে সিটি কর্পোরেশন মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। নগরবাসী অসচেতনভাবে যদি আবর্জনা ফেলে নালা নর্দমার পনিপ্রবাহ বারবার বন্ধ করে দেয়। জমে থাকা পানিতে ফের মশা তাদের বংশ বিস্তার করছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, ওষুধ ছিটিয়ে মশা কমানো প্রায় অসম্ভব। তাই, মশার বংশ বিস্তারকেই থামিয়ে দিতে কাজ করতে হবে। আমরা তাই করে যাচ্ছি। তবে, নতুন করে মশার প্রজনন ক্ষেত্র যাতে সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরী। বাড়িতে থাকা জমা পানি প্রতি তিন দিনে এক দিন ফেলে দিলে এবং যত্রতত্র ময়লা ফেলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না করলে মশার প্রজননের ক্ষেত্র অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়বে।

সবাই সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন। সুন্দর আগামী প্রত্যাশায় সকলকে ঈদ মোবারক ও বাংলা নববর্ষের প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। জয় হোক বাঙালি সংস্কৃতির, জয় হোক বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখক: মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন