বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

করোনা ঋণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তিন বাড়ি কেনার অভিযোগ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে

বুধবার, নভেম্বর ২৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: করোনা ভাইরাস মহামারীতে ব্যবসায়িক ক্ষতি পোষাতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেসব কর্মসূচি নিয়েছে, তার দুই কর্মসূচি থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডলার ঋণ নিয়ে বাড়ি কেনার অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী এক বাংলাদেশির বিরুদ্ধে। নিউইয়র্ক সিটির জ্যামাইকার বাসিন্দা হুমায়ূন কবির (৫৩) ওই অর্থ দিয়ে নায়াগ্রা জলপ্রপাত এলাকায় তিনটি বাড়ি কিনেছেন অভিযোগ এনে মামলা করেছে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কার্যালয়।

মামলার সংবাদ পেয়ে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কুইন্স কাউন্টির ১০৩ পুলিশ স্টেশনে আত্মসমর্পণ করেন উবার চালক হুমায়ূন। পরে তাকে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে হাজির করা হয়। আগামী ২৬ জানুয়ারি হাজিরা দেওয়ার শর্তে তাকে জামিন দিয়েছে আদালত।

কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মেলিন্ডা ক্যাটজ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, উবার ব্যবসায়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হওয়ার কথা বলে হুমায়ূন কয়েক দফায় দুই লাখ ৪৬ হাজার ডলার ঋণ নেন। সেই অর্থ দিয়ে নিউ ইয়র্ক সীমান্তে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের কাছে তিনি তিনটি বাড়ি কিনেছেন। এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মেলিন্ডা ক্যাটজ বলেন, ‘২০২০ সালের জুনে ইকনোমিক ইনজুরি ডিজাস্টার লোন (ইআইডিএল) পেতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রশাসনে (এসবিএ) আবেদন করেন হুমায়ূন কবির। সেখানে নিজেকে নিউইয়র্ক সিটির পরিবহন খাতের কর্মী হিসেবে বর্ণনা করেন। তখন ৫০ হাজার ১০০ ডলার ঋণ পান তিনি।

এরপর ২০২১ সালের মার্চে ‘পেচেক প্রটেকশন প্রোগ্রামের (পিপিপি) জন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রশাসনে আরেকটি আবেদন করেন হুমায়ূন। এ আবেদনে নিজেকে তিনি উবার চালক হিসেবে দেখান। এ দফায় তিনি ২০ হাজার ৮৩৩ ডলার ঋণ পান। দুই মাস বাদে একই কর্মসূচি থেকে ঋণের জন্য ফের আবেদন করেন হুমায়ূন। তখন ক্ষুদ্র ঋণ প্রশাসন তাকে আরো ২০ হাজার ৮৩৩ ডলার ঋণ দেয়। এরপর আগস্টে ইকনোমিক ইনজুরি ডিজাস্টার লোনের পরিমাণ বাড়ানোর আবেদন করেন তিনি। তখন ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ১০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ৫৫ হাজার ২০০ ডলার করা হয়। পরে আরেক বার বাড়িয়ে করা হয় দুই লাখ পাঁচ হাজার ৩০০ ডলার।

ঋণ নেওয়ার সময় হুমায়ূন কবির প্রত্যেকবারই অঙ্গীকারনামায় বলেন যে, ‘ব্যাপক ক্ষতির শিকার ব্যবসায়কে চাঙ্গা করতে ঋণের অর্থ খরচ করবেন।’

করোনা মহামারীর সময় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে চাঙ্গা করতে কখনো বিনা সুদে, কখনো নামমাত্র সুদে; এমনকি ঋণের অর্থ শর্ত অনুযায়ী ব্যয় করলে তা আর ফেরত দেওয়া হবে না- এমনসব সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয়। ওই সময় নিউইয়র্কের বিপুল সংখ্যক মিথ্যা তথ্য দিয়ে পিপিপি ও ইআইডিএল কর্মসূচির অর্থ তসরুপ করেছেন বলে আলোচনা আছে।

এফবিআইসহ বিভিন্ন সংস্থা মাঠে নেমে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে, ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে শতাধিক ব্যক্তি। অপকর্মের সহযোগিতাকারী সিপিএ ফার্মসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে গেল বছরের মার্চ থেকে তদন্তে নামে নিউইয়র্ক স্টেট ফ্যাইন্যান্সিয়াল ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দারা। এফবিআইসহ অন্যান্য সংস্থাও এই তদন্তে শামিল হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরেই উবার চালক হুময়িূনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি কার্যালয়।

মেলিন্ডা ক্যাটজ বলেন, ‘এসবিএ থেকে নেওয়া মোট দুই লাখ ৪৬ হাজার ৯৬৬ ডলারের পুরোটাই বাড়ি কেনাতেই খরচ করেছেন হুমায়ূন। বিষয়টি ব্যাংকের বিবরণীতে স্পষ্ট হয়েছে।’

আসামি হুমায়ূনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেসব প্রমাণিত হলে তার ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। পাশাপাশি ‘প্রতারণামূলকভাবে’ তোলা অর্থও ফেরত দিতে হবে।