ঢাকা: মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে প্রথম বারের মত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটের শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি সিলেট স্ট্রাইকার্স। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিপিএলের নবম আসরের ফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়ান্সের মুখোমুখি হবে সিলেট। বহুল প্রত্যাশিত বিপিএলের ফাইনাল শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। সরাসরি সম্প্রচার করবে নাগরিক টেলিভিশন।
অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই শুধুমাত্র ঈর্ষনীয় রেকর্ড নেই মাশরাফির। বিপিএলেও অধিনায়ক হিসেবে সেরা সাফল্য আছে তার। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চার বার বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন মাশরাফি। প্রথম পাঁচ আসরের মধ্যে চারটিতে অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি তুলে ধরেছেন ম্যাশ। ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিপিএলের প্রথম দুই আসরে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের হয়ে শিরোপা জিতেন মাশরাফি। এরপর ২০১৫ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। পরবর্তী ২০১৭ সালে রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক হিসেবে চতুর্থ বারের মত চ্যাম্পিয়ন হন মাশরাফি।
মাশরাফির পর অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুই বার বিপিএলের শিরোপা জয় করেছেন ইমরুল কায়েস। ২০১৮ ও ২০২২ সালে কুমিল্লার হয়ে দুই বার শিরোপা জিতেছেন ইমরুল। অধিনায়ক হিসেবে এক বার করে বিপিএলের শিরোপা জিতেছেন সাকিব আল হাসান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল। ২০১৬ সালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে শিরোপার স্বাদ দেন সাকিব। একমাত্র বিদেশী অধিনায়ক হিসেবে ২০১৯ সালে রাজশাহী রয়্যালসকে শিরোপা এনে দেন রাসেল। এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের ফাইনালে কখনো হারেন নি মাশরাফি। এ জন্য প্রথম বারের মত ফাইনাল খেলার সুযোগ পাওয়া সিলেট মাশরাফির নেতৃত্বে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছে।
প্লেয়ার ড্রাফটের পর শিরোপা দৌঁড়ের তালিকায় নাম না থাকলেও মাশরাফির নেতৃত্বে যেভাবে ফাইনালে উঠেছে, তাতে আত্মবিশ্বাসী সিলেট।
অভিজ্ঞ ও তরুণদের সম্বনয়ে দল গড়েছিল সিলেট। দলের তরুণ খেলোয়াড়দের বড় কোন টুর্নামেন্টে বলার মত সাফল্য ছিল না। কিন্তু মাশরাফি ম্যাজিকে ম্যাচ জয়ী খেলোয়াড় হয়ে উঠেছেন তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, তানজিম হাসান সাকিবরা। দলকে ফাইনালে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন তারা।
তরুণদের এমন সাফল্য নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমার কোন জাদুর ছোঁয়া নেই, সব আল্লাহর রহমত। খেলোয়াড়রা তাদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করেছে, তাই এমনটা হয়েছে।’
আগে চার বার ফাইনালে উঠে শিরোপা জিতলেও, নবম আসরের ফাইনাল নিয়ে সতর্ক মাশরাফি। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোন ফাইনাল হারেনি বলে এর মানে এ নয়, প্রতিটি ফাইনালেই জয়ী হব।
তিনি বলেন, ‘এটি ফাইনাল, আমরা কোন ঝুঁকি নিতে পারি না। মাশরাফি কোন ফাইনাল হারেনি, এটি ভেবে আমরা আত্মতুষ্ট হতে পারি না। আমাদের সেরাটা দিতে হবে।’
ফাইনালে মাশরাফির দলের প্রতিপক্ষ কুমিল্লা দুর্দান্ত ফর্মে আছে। সিলেটের বিপক্ষেসহ প্রথম তিন ম্যাচ হারের পর, পরের দশ ম্যাচে জয় পায় কুমিল্লা। এ সময় সিলেটকে দুই বার হারায় তারা। দ্বিতীয় লেগে ও প্রথম কোয়ালিফাইয়ারে জয় তুলে নিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে কুমিল্লা।
মাশরাফির মত কোন ফাইনালে হারেননি কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েসও। যদিও দুই বার ফাইনাল ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
মাশরাফি বলেন, ‘কুমিল্লা এ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক দল। কিন্তু, এর মানে এ নয় যে, আমরা তাদের বিপক্ষে কোন ম্যাচেই পারব না। আমরা যদি আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলি এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এগিয়ে থাকতে পারি, তাহলে আমরা শিরোপা জিততে পারবো। কিন্তু ফের বললাম, আমার কাছে কোন জাদুর ছোঁয়া নেই। ছেলেরা এখন পর্যন্ত ভাল খেলেছে এবং আমি চাই, আরেকটি ম্যাচের জন্য তারা ফের জ্বলে উঠুক।’
এ দিকে, কুমিল্লাও জানে- টানা দশ ম্যাচ জয়ের পরও একটি খারাপ দিন সব কিছু নষ্ট করে দিতে পারে। তারা আশা করছে, টুর্নামেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কোন অঘটন না ঘটুক।
কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস বলেন, ‘আমরা আমাদের সেরাটা খেলার চেষ্টা করব। আমরা এখন পর্যন্ত যেভাবে খেলেছি, সেভাবে খেলতে পারলে আশা করি, শিরোপা জিততে পারব।’
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শিরোপা জিতলে, বিপিএলের সবচেয়ে সফলতম দলের তকমা পাবে কুমিল্লা। ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিকে সরিয়ে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি হবে কুমিল্লা। গ্ল্যাডিয়টর্স ও ডায়নামাইটস নামে তিন বার শিরোপা জিতেছে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি।