শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ক্যাপিটল হিলে হামলা/ট্রাম্পকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ তদন্ত কমিটির

রবিবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২

প্রিন্ট করুন
ডোনাল ট্রাম্প

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেস প্যানেল। তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উসকানির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে কংগ্রেসের এ তদন্ত কমিটি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগের সুপারিশ করে।

ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা তদন্তে গঠিত কংগ্রেসের কমিটি বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনগণের ইচ্ছার অবমূল্যায়ন ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে বহু ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেখানেই কমিটির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়েছে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনটিতে আটটি অধ্যায় রয়েছে। ৮৪৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে পাওয়া বিভিন্ন ফল ও সাক্ষাৎকারে আইনি সুপারিশ উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, ‘ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিৎ।’

চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে চলতি সপ্তাহের শুরুতে এর সারসংক্ষেপ প্রকাশ করা হয়। তাতে ১৭টি সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার কথা বলা হয়। এতে ট্রাম্প ও তার সহযোগীদের আইনি কর্মকাণ্ডের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া এ প্রতিবেদনে চারটি অপরাধে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

প্যানেল তার প্রতিবেদনের ১৬০ পৃষ্ঠার সারসংক্ষেপে বলেছিল, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে সম্মান দেখান নি। আইন যথাযথভাবে পালনের পরিবর্তে তিনি নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিলেন।’

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের শুরুতে কমিটির চেয়ারম্যান বেনি থম্পসন বলেন, ‘আমাদের দেশ বর্তমানে এমন অবস্থানে নেই; যেখানে যাবতীয় গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোন একজন পরাজিত প্রেসিডেন্ট যা খুশি তা করবেন ও সংঘাত উস্কে দেবেন। আমরা সেই অবস্থান থেকে অনেক অনেক দূরে সরে এসেছি।’

তদন্ত প্রতিবেদনে ট্রাম্প ও ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সাথে চরমপন্থী কোন ব্যক্তি বা তার সমর্থকরা যে নির্বাচনে প্রার্থী না হতে পারে, সে জন্য দেশের নির্বাচনী আইন সংস্কার করা প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বাধীন এ প্যানেলের সুপারিশ বিচার বিভাগ মানতে বাধ্য নয়। কিন্তু এ প্রথম বার কোন কংগ্রেস কমিটি সাবেক কোন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার সুপারিশ করেছে।

কংগ্রেস কমিটির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ‘এটা ‘অত্যন্ত পক্ষপাতমূলক’।’ একে ‘উইচ হান্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, ‘৬ জানুয়ারির যে বিক্ষোভ, সেই নির্বাচনী কারচুপির কারণ অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়েছে এটি।’ গত মাসে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।

২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান ট্রাম্প। জয়ী হন ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। পরাজিত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে আসছিলেন। এমনকি নির্বাচন বাতিলের দাবিতে রাজধানী ওয়াশিংটনসহ একাধিক রাজ্যের আদালতে কয়েকটি মামলাও করেন তিনি। কিন্তু সেসব মামলায় পরাজিত হন তিনি।

২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটল হিল ভবনে দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করতে এক যৌথ অধিবেশনে বসেছিলেন ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিক পার্টির আইনপ্রণেতারা। অন্য দিকে, সে দিন সকাল হওয়ার বেশ আগেই ‘আমেরিকাকে বাঁচাও’ নামের একটি গণজমায়েত কর্মসূচিতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে জড়ো হন হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। পাশাপশি এ অনুমোদন প্রক্রিয়া রুখে দিতে ভক্ত-সমর্থকদের সক্রিয় হওয়ার আহবানও জানান তিনি। তার বক্তব্য দেয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে সমাবেশস্থল থেকে কয়েক শত মিটার দূরে ক্যাপিটল হিল ভবনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হন কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থক। এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল হিলের ভেতর ঢুকে তাণ্ডব শুরু করেন ট্রাম্প সমর্থকরা। এ সময় তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল ট্রাম্পের পতাকা। সে দিন ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হন আরো ১৪০ জন। এ ঘটনার তদন্তে ২০২১ সালের জুলাইয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কংগ্রেস। এরপর গত ১৮ মাসে এ কংগ্রেস প্যানেল গঠনের পর থেকে এক হাজার সাক্ষাৎকার, দশটি শুনানিসহ দশ লাখের বেশি নথি সংগ্রহ করে। কংগ্রেসের এ প্যানেল আগামী ৩ জানুয়ারি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ, ওই সময় প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে চলে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি।