ঢাকা: কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক আচানক ডলারের বিনিময় হার সাত টাকা বাড়ানোর এক দিন পর বৃহস্পতিবার (৯ মে) অনানুষ্ঠানিক খোলা বাজারে মার্কিন ডলার প্রায় উধাও হয়ে যায়। টাকায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে বুধবার (৮ মে) ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে এক দিনেই ডলারের বিনিময় হার সাত টাকা বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফলে, ভবিষ্যতে মুনাফার জন্য ব্যবসয়ীদের মুদ্রা মজুতদারির সংবাদে খোলা বাজারে ডলার খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। এমনকি মরিয়া ক্রেতারা তাদের বিদেশে যাতায়াত ও চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে খোলা বাজারে এক ডলারের জন্য ১২৫ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বেসরকারি চাকরিজীবী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘থাইল্যান্ডে তার পিতার চিকিৎসার জন্য তিনি খোলা বাজার থেকে পাঁচ হাজার ডলার কেনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি দেখেছেন, খোলা বাজারে প্রতি ডলার ১২৫ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে।’
এর পূর্বে, তিনি ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে চেয়েছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যাংকগুলো একাধিক নথি চেয়েছিল ও পাঁচ হাজার ডলার বিক্রি করার মত বহু প্রশ্ন ছিল।
জাহাঙ্গীর জানান, একটি ব্যাংক পাঁচ ধরনের কাগজপত্র নিয়ে মাত্র ৫০০ ডলার সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে।
থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে পিতার অস্ত্রোপচারের ডলার জোগাড় করতে খোলা বাজারে গিয়েছিলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্টনের এক মানি চেঞ্জার বলেন, ‘৮ মে পর্যন্ত অপ্রাতিষ্ঠানিক বাজারে মার্কিন ডলারের দর ১১৭ টাকার আশপাশে থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিনিময় হার বাড়ানোর ঘোষণার পর আচমকা করে তা বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘এটা শুধু মার্কিন ডলারের ক্ষেত্রেই ঘটেনি। হজ মৌসুম শুরু হওয়ায় সৌদির রিয়ালের চাহিদা বেশি থাকায় অন্যান্য মুদ্রার বিনিময় হারও রাতারাতি ৪-৫ টাকা বেড়েছে।’
নগদ ডলার ও অন্যান্য প্রধান মুদ্রার প্রধান উৎস খোলা বাজারে এক দিনের ব্যবধানে বিনিময় হার সাত টাকা বাড়ানোর সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের এক দিন পরই বিনিময় হার লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।
আতিকুর রহমান বেশ কয়েক বছর ধরে খোলা বাজারে ডলার বিক্রি করছেন। বৃহস্পতিবার (৯ মে) ক্রেতা পরিচয় দিয়ে তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন এ প্রতিবেদক। তিনি প্রথমে বলেছিলেন, ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু, পরে তিনি ১১৯ টাকা দরে ডলার বিক্রি করতে রাজি হন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংকে পর্যাপ্ত ডলার রয়েছে ও মানুষ ডলার কিনতে ব্যাংকে যেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের খুচরা বিক্রির জন্য ডলারের পর্যাপ্ত রিজার্ভ আছে ও সরবরাহ ভালো। এখন কে বিক্রি করবে বা করবে না, সেটা তার বিষয়। যারা মানি এক্সচেঞ্জে ডলার পাননি, তারা ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারেন। খুচরা ও এলসি চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখন ৫০ মিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে।’
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খোলা বাজারে ডলারের সাময়িক ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বাড়াতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে।
তিনি আরো বলেন, ‘ডলার ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক মুদ্রার দর আরো বাড়ানোর সংকেত পেয়েছেন, সে কারণেই তারা স্টক রাখার পর ডলার ঘাটতির কথা বলছেন। সরবরাহ বাড়লে হার কমবে।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘খোলাবাজারে বিনিময় হার সব সময়ই ব্যাংকের চেয়ে বেশি থাকে, কখনো কখনো বাজার তদারকির অভাবে তা অস্বাভাবিক পর্যায়ে বেড়ে যায়।’