শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদারের আহবান প্রধানমন্ত্রীর

বুধবার, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদারের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বাস করেন, একটি নিরাপদ ও উপযুক্ত বাসস্থান সব ব্যক্তির মৌলিক অধিকার।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গৃহহীনতা সত্যিই একটি অভিশাপ। এটি উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, এ অভিশাপ দূর করার বিষয়টি আমাদের সামর্থ্যের মধ্যেই রয়েছে। এখানে সমবেত হওয়া আমাদের সব বন্ধু ও অংশীদার এর বাস্তবায়নে একটি দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ‘টেকসই ও সাশ্রয়ী আবাসন’ বিষয়ক একটি পার্শ্ব অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে বলেন, ‘এ সমস্যাটি তিনি হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করেন।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘নিউ আরবান এজেন্ডা আমাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দরকারি নীলনকশা দেয়। এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তাকারী দেশগুলোতে আমাদেরকে অবশ্যই ইউএন হাবিট্যাটসকে সমর্থন দিতে হবে। বাংলাদেশ এ বিষয়গুলোকে সামনে আনতে নিউইয়র্কে বন্ধুমহলের সাথে যুক্ত থাকবে। আসুন, আমরা এমন একটি বিশ্বের জন্যে কাজ চালিয়ে যাই, যেখানে গৃহহীনতা অতীতের বিষয় হয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে ১৬ কোটির একটি জনবহুল দেশ হয়েও বাংলাদেশ গৃহহীনতার বিষয়টি সফলভাবে সমাধান করতে পেরেছে। আমরা গৃহহীন-ভূমিহীন লোকজনকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দিয়েছি। আমি আজ এখানে এসেছি সারা দেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্যে টেকসই ঘর নির্মাণে আমার সাফল্যের অভিজ্ঞতাগুলো বিনিময় করতে ‘

‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান উন্নয়নের অগ্রাধিকার হিসেবে ভূমিহীন, গৃহহীন ও শিকড়হীন মানুষকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্নের কথা বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে তার সরকার ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প চালু করে- যার অর্থ ভূমিহীন ও আশ্রয়হীনদের জন্য আবাসন।’ বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত দুই দশকে তার সরকার সকলের জন্যে বিনা মূল্যে আবাসন নিশ্চিত করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। বাংলাদেশের এ কাভারেজ এলাকা কেবল সিটিতে নয়, দেশের প্রতিটি গ্রাম, শহর, জেলা, দ্বীপ ও পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষে এ প্রচেষ্টা আরো ব্যাপকভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। কেবল গত দুই বছরেই দুই লাখ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে; যেখানে প্রায় দশ লাখ লোকের আশ্রয় জুটেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত ১৮ বছরে আমার প্রধানমন্ত্রীত্বকালে আমরা পাঁচ লাখেরও বেশি ঘরে ৩৫ লাখ গৃহহীন লোকের থাকার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া বর্তমানে আরো ৪০ হাজার ঘর নির্মাণের কাজ চলছে।’

তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পরিবার ৪০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের দুই বেডরুম, একটি লম্বা বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি স্যানিটারি ল্যাট্রিনসহ ইটের তৈরি একটি বাড়ির মালিকানা পাচ্ছে।’

আমরা সব বাড়িতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ করছি। আমরা বিনামূল্যে বসতবাড়িসহ বাড়ি ও জমি দিয়েছি, যা ইতিহাসে অনন্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব বাড়ির সুবিধাভোগীরা হলেন, ভূমিহীন-গৃহহীন, ভিক্ষুক, দিনমজুর, নিঃষ¦ নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ব্যক্তি, পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি, জাতিগত সংখ্যালঘু, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, কুষ্ঠরোগী, ঝাড়ুদার ও তথাকথিত নিম্নবর্ণের হরিজন সম্প্রদায়।’

তিনি আরো বলেন, তারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকেও সহায়তা দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে আমরা কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবনে পাঁচ হাজার জলবায়ু-শরণার্থী পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আগে কর্মসংস্থান ও থাকার জন্যে শহরগুলোতে গৃহহীন লোকের ছুটে আসার দৃশ্য অতি পরিচিত ছিল। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এ প্রবণতা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে কারণ, এসব লোক নিজস্ব এলাকাতেই এখন স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল অনুসরণ করছি। এ মডেল একজন পুনর্বাসিত ব্যক্তিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের সাথে আত্মনির্ভরশীল ও স্ব-মর্যাদাপূর্ণ করার জন্যে একটি সামগ্রিক পদ্ধতি নিশ্চিত করে। প্রকল্পটি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্যে জমি ও বাড়ির সমান মালিকানা নিশ্চিত করে। বাসস্থান দেশের সব নাগরিকের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা ও এটি অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পূরণের সুযোগ সৃষ্টি করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা দেখেছি যে, একটি বাড়ি শুধু থাকার জায়গা নয়; বরং আবাসন নিরাপত্তা একজন ব্যক্তির অর্থনৈতিক মুক্তিকে ত্বরান্বিত ও মর্যাাদার সাথে বসবাসে অনুপ্রাণিত করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জমি ও ঘরের পাশাপাশি শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানোরও সফল ব্যবস্থা করেছি।’

তিনি বলেন, `এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্যে আমরা নিকটবর্তী কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে যুক্ত করেছি। নারী ও শিশুরা ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে পাচ্ছে। বসতবাড়িতে বাগান করা, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ উৎপাদনসহ ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কার্যক্রম নারীদের নেতৃত্বে চলছে। এসব কর্মকান্ড এ উদ্যোগকে টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব করেছে।’

অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন মালওয়াইয়ের প্রেসিডেন্ট লাজারাস ম্যাককার্থি চাকভেরা, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী সঞ্জয় ভার্মা, জাতিসংঘে স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের স্থায়ী প্রতিনিধি মিশেল ম্লিনার এবং আইএলও এর মহা পরিচালক গাই রাইডার।