মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪

শিরোনাম

গ্রেট ব্রিটেনের প্যান্টোমাইম- একটি বহতা নদীর গল্প

সোমবার, আগস্ট ৮, ২০২২

প্রিন্ট করুন

স্নিগ্ধা ফেরদাউস: পশ্চিমা সংস্কৃতিতে প্যান্টোমাইমের একটি দীর্ঘ নাট্য ইতিহাস রয়েছে। প্যান্টোমাইম শব্দটি সর্বপ্রথম দেখা যায় ১৭১৭ সালে, ইংল্যান্ডের একটি পোস্টারে। এ শব্দটি প্রাচীন গ্রীক ভাষা থেকে এসেছে, যেখানে প্যান্টোমাইম অভিনেতা বলতে একজন নৃত্যশিল্পীকে বোঝাত, যিনি একই প্রদর্শনীর মধ্যে একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। প্যান্টোমাইমের উৎপত্তি সম্পর্কে খোঁজ নিতে গেলে ১৬ শতকের ইতালীয় বিনোদন দল Commedia Dell Arte এর নামটি সর্বাগ্রে উঠে আসে। Commedia Dell Arte বা কমেডি অফ দ্য আর্টিস্টস দলটি নাচ, গান, টাম্বলিং ও অ্যাক্রোব্যাটিক্সকে বিনোদনের মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করতো। ১৭ শতকের সময়ে Commedia Dell Arte পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ও ১৮ শতকের শুরুর দিকে কমেডি চরিত্রগুলো লন্ডনের মঞ্চে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়া শুরু করে। প্রদর্শনীগুলো তৈরি করা হতো ক্ল্যাসিক্যাল গল্পের ওপর ভিত্তি করে, যেখানে মিউজিকের ব্যবহার থাকত, কিন্তু কোন সংলাপ থাকত না। ১৮৪৩ সাল পর্যন্ত থিয়েটার লাইসেন্সিং প্রদর্শনীর সময় কথ্য শব্দের ব্যবহার সীমাবদ্ধ করেছিল। পরবর্তী থিয়েটার আইন এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ও রাজকীয় পেটেন্ট ছাড়াই যে কোন থিয়েটারকে বিশুদ্ধভাবে কথ্য সংলাপ দিয়ে নাটক নির্মাণের অনুমতি দেয়। যদিও ব্রিটেনের বাইরে ‘প্যান্টোমাইম’ শব্দটি প্রায়শই প্রচলিত নাট্য রূপের পরিবর্তে নির্বাক অনুকরণকে নির্দেশ করে।

Commedia Dell Arte এরপর ক্রমশ সমগ্র মহাদেশে বিস্তার লাভ করে। ১৫৭৫ সালে যখন রানী এলিজাবেথ কেনিলওয়ার্থ দুর্গ পরিদর্শনে যান, তখন তার সম্মানে এক জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে ইতালিয়ান এ কৌতুক কোম্পানিটি অংশ নেয় ও রানীর সামনে তাদের প্রদর্শনী উপস্থাপন করে।

১৮ শতকের শুরু থেকে ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত প্যান্টোমাইমের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযোজনা ছিল হারলেকুইনেড। সে সময়ে হার্লেকুইন চরিত্রটি ছিলো প্যান্টোমাইমের সবচেয়ে জনপ্রিয় বা তারকা চরিত্র। ১৭৩২ সালে জন রিচ সর্বপ্রথম হারলেকুইন চরিত্রে অভিনয় করেন, যেখানে তিনি মিউজিক ব্যবহার করতেন ও নাচতেন। এ মিউজিক্যাল প্যান্টোমাইম পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি যে মুনাফা অর্জন করেন, তা দিয়ে কভেন্ট গার্ডেন থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। ইতোমধ্যে অভিনেতা ও ব্যবস্থাপক ডেভিড গ্যারিক একটি সবাক হারলেকুইন চরিত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে সকলকে চমকে দেন। তিনি জন রিচের ছাত্র হেনরি উডওয়ার্ডকে নতুন নতুন গল্প লেখার জন্য নিযুক্ত করেন। এ গল্পগুলো রবিন হুডের মত কিছু পুরানো জনপ্রিয় গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল।

১৮০৬ সালে হার্লেকুইন, মাদার গুজ অথবা গোল্ডেন এগ নামক প্রযোজনাগুলোতে হার্লেকুইন চরিত্রকে ছাপিয়ে ক্লাউনই হয়ে ওঠে প্রযোজনার কেন্দ্রীর ও কমিক ব্যক্তিত্ব। জোসেফ গ্রিমাল্ডি অভিনীত ক্লাউন চরিত্রটি ছিল একটি দুষ্টু চরিত্র, যার মাধ্যমে গ্রিমাল্ডি মঞ্চে বিশৃঙ্খলা ও হৈ-হট্টগোল সৃষ্টি করতেন। গ্রিমাল্ডির অ্যাক্রোবেটিক ক্ষমতা ছিল দুর্দান্ত। তিনি ছিলেন ব্যঙ্গ ও হাস্যরসের ওস্তাদ। যদিও ক্লাউন চরিত্রটি কথা বলত খুব কম, জোসেফ গ্রিমাল্ডি বেশ কিছু গান পরিবেশন করতেন, যা শ্রোতারা ব্যাপকভাবে পছন্দ করত। জোসেফ গ্রিমাল্ডি ক্লাউন হিসেবে এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে তার সম্মানে ভাঁড়দেরকে ‘জোয়ি’ নামেও ডাকা হত।

মধ্যযুগীয় রহস্য নাটকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে ইংরেজ ক্লাউন বা ভাঁড় চরিত্রটি আবির্ভূত হয়। প্রথম পেশাদার পর্যায়ের ক্লাউনদের মধ্যে উইলিয়াম কেম্পে ও রবার্ট আরমিন দুইজনই ছিলেন বিখ্যাত ও তারা উভয়েই শেক্সপিয়রের কোম্পানির সাথে যুক্ত ছিলেন। উইলিয়াম কেম্পে ছিলেন এমনই গুরুত্বপূর্ণ একজন তারকা, যিনি কোম্পানি ও গ্লোব থিয়েটার- দুটোরই আংশিক মালিক ছিলেন। কথিত আছেন যে, হ্যামলেট নাটকে শেক্সপিয়ার ক্লাউনদের মুখ দিয়ে যা বলিয়েছেন, তা আসলে ছিল ক্লাউনদের জনপ্রিয় করার জন্য কেম্পের লেখা বিজ্ঞাপন স্ক্রিপ্টের সমালোচনা। মূলত, ইতালি ও ফ্রেঞ্চ কোম্পানিগুলো যখন লন্ডনে তাদের প্রযোজনা নিয়ে আসে, তখন শেক্সপিয়ার সেই প্রযোজনাগুলো দেখেন ও পরবর্তী তার লেখা নাটকগুলোতে এ প্যান্টোমইম প্রযোজনাগুলোর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

ধীরে ধীরে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, শব্দের খেলা, দর্শকদের অংশগ্রহণ, রূপকথার চরিত্র, মিউজিক, জীবিত প্রাণি, নারী পুরুষ চরিত্র অদলবদল, নৃত্য- এ সবই প্যান্টোমাইমের অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। সে সময়ে যে কোন বিষয়ই সাদরে গৃহীত হত, কারণ তখন প্যান্টোমাইম প্রচলিত বিভিন্ন গল্পের সাথে সামাজিক ব্যঙ্গের মিশ্রণ ঘটিয়ে দর্শকদের চিত্ত বিনোদনের খোরাক জোগাত।

ভিক্টোরিয়ান প্যান্টোমাইমের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে নারী-পুরুষ চরিত্র অদলবদলের বিষয়টি। ১৮৩৭ সালে অভিনেতা ও ব্যবস্থাপক লুসি এলিজা ভেস্ট্রিস অলিম্পিক থিয়েটারে ব্রীচ (আঁটসাঁট প্যান্ট) পরিধান করে অভিনয় করেন ও তার স্বামী চার্লস ম্যাথিউস বিড়ালের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ঐ যুগে সাধারণ মহিলারা লম্বা স্কার্ট দিয়ে তাদের পা ঢেকে রাখতেন। এ রকম একটি যুগে মহিলাদের হাফপ্যান্ট ও আঁটসাঁট পোশাকে অভিনয় করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। ১৯ শতকের শেষের দিকে মহিলাদের ছেলে সেজে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার বিষয়টি প্যান্টোমাইমের একটি স্বীকৃত প্রথায় পরিণত হয়।

ভিক্টোরিয়ান প্যান্টোমাইমে মঞ্চে প্রায়ই জীবন্ত প্রাণিদের ব্যবহার করা হত। গাধা ছিল ক্লাউন বা ভাঁড়দের পরিবহনের একটি পছন্দের মাধ্যম। অভিনেতারা ‘স্কিন’ নামে পরিচিত পশুর পোশাক পরিধান করে মঞ্চে অভিনয় করতেন। সবচেয়ে পরিচিত ছদ্মবেশী অভিনেতা ছিলেন চার্লস লরি জুনিয়র। তিনি বানর, ভালুক, নেকড়ে, উটপাখি ও এমনকি ক্যাঙ্গারু হিসেবে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে নিজেকে উপস্থাপন করেন।

পরবর্তী প্যান্টোমাইমের ক্ষেত্রে বিস্তৃত সেট ডিজাইন ও এর প্রভাবের উপর ক্রমশ মনোযোগ বাড়ানো হয়। বিভিন্ন রকম ট্রিক সিনারীর ব্যবহার ও দৃশ্যের দ্রুত পরিবর্তনের জন্য উভয় দিকে ছবি আঁকা ক্যানভাস ব্যবহার করা হত। প্যান্টোমাইমের একটি মূল অংশ ছিল স্ল্যাপস্টিক কমেডি। স্ল্যাপস্টিক হল এক ধরণের শারীরিক কমেডি; যা অযৌক্তিক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে বিস্তৃত হাস্যরসের উদ্রেক ঘটাত। পরবর্তী মঞ্চে জাদুকরী প্রভাব আনার জন্য আলোর ব্যবহার যোগ করা হয়। ১৮১৭ সালে গ্যাসলাইট ও ১৮৮১ সালে লন্ডনের স্যাভে থিয়েটারের মঞ্চে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয়।

শতাব্দীর শেষের দিকে, লন্ডনের প্যান্টোমাইম এক মহাকাব্যিক অনন্যতায় পৌঁছে যায়। ১৯০০ সালের স্লিপিং বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্টের প্রযোজনাটি ছিল ড্রুরি লেন থিয়েটারে প্রদর্শিত সবচেয়ে জমকালো ও সফল প্যান্টোমাইমগুলির মধ্যে একটি।

জন রিচ ও ডেভিড গ্যারিককে অনুসরণ করে, ১৯০০ এর প্রথম দশকে ফ্রান্সিস লেইডলার অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন ও আক্ষরিক অর্থেই ‘প্যান্টোমাইমের রাজা’ হিসেবে পরিচিতি পান। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশকের প্যান্টোমাইম প্রযোজনার অন্যতম নাম হচ্ছে ডেরেক সালবার্গ, যিনি বার্মিংহামের আলেকজান্দ্রা থিয়েটার থেকে অসংখ্য সফল প্রযোজনার তত্বাবধান করেছিলেন।

প্যান্টোমাইমের সাথে ক্রিসমাস উৎসবটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ১৮০০ এর দশকে শিশুরা ক্রিসমাস ও নব বর্ষের ছুটির কাছাকাছি সময়টায় (প্রায়শই ইস্টার বা অন্যান্য সময়ে) থিয়েটারে যেত হারলেকুইনেড উপভোগ করার জন্য। সাধারণত প্যান্টোমাইমের গল্পগুলোর সাথে ক্রিসমাসের সরাসরি কোন সাদৃশ্য থাকত না। প্রায় সবসময়ই ঐতিহ্যগত শিশুতোষ গল্প, বিশেষ করে চার্লস পেরাল্ট, জোসেফ জ্যাকবস, হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসন ও গ্রিম ব্রাদার্সের রূপকথার উপর ভিত্তি করে প্রযোজনাগুলো পরিবেশন করা হত। সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু প্যান্টোমাইম গল্পের মধ্যে রয়েছে- সিন্ডারেলা, আলাদিন, ডিক হুইটিংটন, হিজ ক্যাট, স্নো হোয়াইট ও সেভেন ডোয়ার্ফস। সেইসাথে জ্যাক অ্যান্ড দ্য বিনস্টক, পিটার প্যান, পুস ইন বুটস এবং স্লিপিং বিউটিও উল্লেখযোগ্য। ক্রিসমাসের প্রতিটি প্রযোজনায় অবধারিতভাবেই কয়েকটি চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হল-
প্রিন্সিপাল বয়/হিরো: প্রধান বালক বা নায়ক চরিত্রের উৎকৃষ্ট উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আলাদিন, রবিন হুড, স্নো হোয়াইট অথবা স্লিপিং বিউটির মত প্রযোজনাগুলোর কথা। এ প্রযোজনাগুলোতে নারী কিংবা পুরুষ অভিনেতারা ছেলে সেজে অভিনয় করতেন।

প্রিন্সিপাল গার্ল: প্রধান বালিকা চরিত্রের ক্ষেত্রে স্নো হোয়াইট, বিউটি এ্যান্ড দ্য বিস্ট, মেইড মেরিয়ন অথবা জ্যাক এ্যান্ড দ্য বিনস্টক উল্লেখযোগ্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ চরিত্রগুলো খুব বুদ্ধিমতী হত, যারা সাধারণত গল্পের নেতিবাচক চরিত্রগুলোর কাছ থেকে নানা রকম হুমকি পেত (যেমন- স্নো হোয়াইটকে রানী হত্যা করতে চেয়েছিল)। প্রধান বালিকা প্রধান বালকের প্রেমে পড়ত x পরিশেষে সঠিক লোকটির সাথেই মেলবন্ধনে আবদ্ধ হত।

দ্য ডেম: উইন্ডো টোয়াঙ্কি, কুকস, নার্সেস, আগলি সিস্টার্স প্রযোজনাগুলোতে ‘ডেম’ চরিত্রটি পাওয়া যায়, যেখানে প্রায় সর্বদাই একজন পুরুষ মহিলা সেজে অভিনয় করতেন। প্যান্টোমাইমের সবচেয়ে হাস্যরসাত্মক উপাদান ছিল এ ‘ডেম’ চরিত্রটি। পুরুষেরা হাস্যরস সৃষ্টির জন্য অতিরঞ্জিত নাটকীয় ভঙ্গিতে এ চরিত্রে অভিনয় করত। তারা তাদের কণ্ঠস্বর ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদের মত করার চেষ্টা করত।

দ্য ব্যাডি: এ চরিত্রগুলো সব সময় বিপুল ক্ষমতা আর ধনসম্পদ হস্তগত করার বুদ্ধি আঁটত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা প্রধান বালক/বালিকার অনিষ্ট সাধনের চেষ্টা করত x সমাপ্তিতে অদৃষ্টের বিচারস্বরূপ শাস্তি লাভ করত।

দ্য গুড ফেইরি: মূলত একটি প্যান্টোমাইম প্রযোজনার সুখী সুন্দর সমাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করত এ গুড ফেইরি চরিত্রটি। সাধারণত নারীরাই এ চরিত্রে অভিনয় করতেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সিনড্রেলার গডমাদার এর কথা, যিনি যুবরাজের সাথে দেখা করার জন্য গাড়ি x গাউন দিয়ে সিনড্রেলাকে সাহায্য করেছিলেন।

ইংল্যান্ডে প্যান্টোমাইম শিল্পের জন্ম, বিস্তার x বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উপরিল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ডের প্যান্টোমাইমের বেশকিছু বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা যায়। তার মধ্যে নারী-পুরুষ চরিত্রের অদলবদল বা লিঙ্গ পরিবর্তন করে অভিনয়; ভাল বনাম মন্দের গল্প; স্ল্যাপস্টিক কমেডি; উদ্ভট ও বাহারী বর্ণের পোশাক; প্রাচীন রূপকথার গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত; সঙ্গীত ও সংলাপের ব্যবহার; ইউরোপের অন্যান্য দেশ যেমন ফ্রান্স বা ইতালিতে ব্যবহৃত সাজসজ্জা অনুকরণ না করা; প্রদর্শনীতে জীবিত প্রাণি ব্যবহার; মঞ্চ থেকে ধীরে ধীরে স্ট্রীট শোতে বিস্তার লাভ ও সর্বোপরি দর্শকদের বিনোদনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে একটি সফল পরিবেশনা তৈরির চেষ্টা করার মত বিষয়গুলো উল্লেখ্যযোগ্য।

তাহলে প্রশ্ন জাগে- এতসব ভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে লন্ডনের প্যান্টোমাইম কী অন্যদের চেয়ে একটি স্বতন্ত্র রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে? উত্তর হবে- হ্যাঁ। গ্রেট ব্রিটেনের প্যান্টোমাইম প্রযোজনাগুলোর মূলে রয়েছে তাদের শতাব্দী প্রাচীন রাজকীয় জীবনধারা ও ঐতিহ্যবাহী সব গল্প। প্রযোজনাগুলোতে উপস্থাপিত বিভিন্ন চরিত্র ও তাদের ব্যবহৃত পোশাক-আশাক ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি আমাদেরকে সেই ইঙ্গিতই দেয়। অন্যকে অনুকরণ নয়, বরং প্যান্টোমাইমের ধারণাটি লন্ডনসহ গ্রেট ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে নিজস্ব কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে পুঁজি করেই। একই কথা হয়তো প্রযোজ্য প্রতিটি দেশের মূকাভিনয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের একজন পার্থ প্রতীম মজুমদার যখন তার মূকাভিনয়ে ফুটিয়ে তোলেন পদ্মা নদীর জেলেজীবন, তখন লন্ডনের প্যান্টোমাইম ও বাংলাদেশের প্যান্টোমাইম একসূত্রে গাঁথা হয়ে বৈকি- আর তা হল নিজস্ব সংস্কৃতির স্বকীয়তার সূত্র। এখানেই শিল্পের সৌন্দর্য, সৃষ্টির নান্দনিকতা। শিল্প হচ্ছে বহতা নদীর মত, যা চলার পথে কুড়িয়ে নেয় বিভিন্ন প্রান্তরের আপন আপন কৃষ্টি-ঐতিহ্যের নুড়িপাথর ও পরিশেষে রূপ লাভ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎসবের এক মহাসমুদ্রে।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট