রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

শিরোনাম

চট্টগ্রামের সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত নাম কীর্তিমান শিশুসাহিত্যিক‌ ও কথাশিল্পী দীপক বড়ুয়া

শনিবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন
মোহাম্মদ ওয়াসিম

মোহাম্মদ ওয়াসিম: নোবেল বিজয়ী ব্রিটিশ মহাজ্ঞানী, চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও মনীষী বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেয়া ও বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।’
দীপক বড়ুয়া এমন এক লেখক, যার ভেতর অন্য রকম প্রয়াস আমরা প্রত্যক্ষ করি; যিনি মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বহু বছর। সচেতনভাবে তিনি অংকন করেন সমাজকে। এক কথায় তাকে সমাজ অভিমুখী লেখকও বলা যায়। সমাজের মানুষকে দেখার চোখ তার তীক্ষ্ণ এবং বোধও তার ‘গাঢ় ও সংবেদী’। তার গল্পে উঠে এসেছে মানুষ-মানুষের সম্পর্ক-সম্পর্কের বিচিত্র গতি, দুঃখ-বেদনা, ভালবাসা-প্রতারণা, হিংসা-দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অভিঘাত।

দীপক বড়ুয়া বাংলাদেশের সাহিত্যাঙ্গনে এক অনন্য নাম। অর্ধ শত বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে লেখালেখি করে তিনি পরিণত হয়েছেন অনিবার্য ব্যক্তিত্বে। ছোট আর বড়- উভয়ের জন্য সমান আন্তরিকতায় তিনি তার হাত সচল রেখেছেন। গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি ছড়া ও কিশোর কবিতা নির্মাণেও তিনি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন তার অসামান্য প্রতিভা। সাহিত্য সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ দীপক বড়ুয়া এক সময় সম্পাদনা করতেন চর্যা, ঋভু, মোক্ষ, খোকন ও শিশুমেলা। এছাড়া, ‘নতুন ভোরের স্বপ্ন’ নামে একটা গল্পগ্রন্থের সম্পাদনা করে আলোড়ন তুলেছিলেন।

শিশুতোষ লেখায় দীপক বড়ুয়ার রয়েছে প্রাণের যোগ। শিশু-কিশোরের প্রতি তার ভালবাসাই প্রকাশ পেয়ে থাকে তার নানা গল্পে। আমাদের শিশুসাহিত্যে তার অবস্থান সুদৃঢ় হলেও বড়দের জন্যও তিনি সপ্রাণ। এবার প্রকাশিত হল বড়দের জন্য তার অনবদ্য উপন্যাস ‘সুন্দরী’। উপন্যাসের বিষয়-বৈচিত্র্যে, ভাষা প্রয়োগে, বাক্য গঠনে দীপক বড়ুয়া মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। আমরা বলতে পারি, তার পুরো সাহিত্যজীবনে নানামুখী যে সব রচনা তিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন, তা আমাদের সাহিত্যে বড় সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হবে নিঃসন্দেহে। এছাড়াও, তিনি চট্টগ্রাম একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং আরো অন‍্যান‍্য সামাজিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত আছেন।

দীপক বড়ুয়ার প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে কান্ডদেখো ভূতের, ভোরের আলোর স্বপ্ন নাচ, স্বপ্নরানী, জাম্বু ভূতের কান্ড, নীল আকাশে ঘুড়ির দেশে, এলোমেলো, ভূতের ছড়া, তোমার চোখে চোখ রেখেছি, অন্য রকম ভালবাসা, বনলতা সেনের আকাশ যাপন উল্লেখযোগ্য।

দীপক বড়য়ার জন্ম চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জাঁহানপুর গ্রামে। জীবনসঙ্গী চন্দা বড়ুয়া, বড় ছেলে নিক বড়ুয়া, বউমা আসুকা বড়ুয়া ও নাতি লিওন, ছোট ছেলে প্রিতম বড়ুয়া, বউমা সঙ্গীতা বড়ুয়া মৌ, নাতনি নারিতা বড়ুয়া ও নোরা বড়ুয়াকে নিয়ে তার সংসার।

দীপক বড়ুয়া স্বীকৃতি ও সম্মাননা স্বরুপ যে সব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে কর্ণফুলি সাহিত্য পুরস্কার ১৯৭৭, পালক এওয়ার্ড ১৯৯৬, চারুলতা ২০০৫, বীর চট্টগ্রাম মঞ্চ ২০১১, কথন ২০১৩, কবি ওহীদুল আলম সাহিত্য সম্মাননা ২০১৪, শিশুদের পাঠশালা ২০১৫, ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদ ফাউণ্ডেশন ২০১৭, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি পদক ২০১৮ উল্লেখযোগ্য।

কীর্তিমান শিশুসাহিত্যিক‌ ও কথাশিল্পী শ্রদ্ধেয় দীপক বড়ুয়া’র সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

লেখক: বংশীবাদক, সংস্কৃতিকর্মী, চট্টগ্রাম