রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগে আগ্রহী সংযুক্ত আরব আমিরাত

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সাথে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সচিবালয়ের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদি এ আগ্রহের কথা জানান।

সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রাম বন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিনিয়োগ করতে চায় জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্ধু রাষ্ট্র। ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ব্যাপারে উভয় দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, নিটওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের সাথে আরো বৃহৎ পরিসরে নতুনভাবে কাজ করতে আগ্রহী। যার মাধ্যমে উভয় দেশের জনগণই উপকৃত হবে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডিপি (দুবাই পোর্ট) ওয়ার্ল্ড বর্তমানে ছয় মহাদেশ জুড়ে ৬০টির বেশি সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া দশটি দেশে তাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আমাদের লন্ডন গেটওয়ে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায়ও ভাল অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিশ্বাস করে, বাংলাদেশেও বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে।’

রাষ্ট্রদূতের এ বিনিয়োগ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে বহুমাত্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানাই।’

উপদেষ্টা মনে করেন, এটির মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশের জন্য যেটি মঙ্গলজনক, সে সব বিদেশি প্রস্তাবকে বর্তমান সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে।

এ সময় উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশী নাবিকদের জন্য দুবাইয়ের ভিসা জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে সহজ উপায়ে ট্রানজিট ভিসা ইস্যু করার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত উপদেষ্টার প্রস্তাব গ্রহণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশী নাবিকদের জন্য এখন থেকে সহজ উপায়ে ট্রানজিট ভিসা প্রদানের পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

উভয় দেশের মধ্যেকার বাণিজ্য ঘাটতি দূর করে বাণিজ্য ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পাটজাত পণ্য আমদানির আহ্বান জানিয়ে বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা বলেন, ‘সোনালী আঁশ পাট বাঙালির ঐতিহ্য। এটি সহজে পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব। আমরা পাটের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। এরমধ্যে ২৮২ ধরণের পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। যা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পরিবেশ দূষণরোধে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের সুপার শপগুলোতে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুবাইয়ের সুপারশপগুলোতেও এসব পণ্য যা পরিবেশের ক্ষতিকর সেগুলো ব্যবহারে বিধি নিষেধ রয়েছে। ইউএই সরকার বাংলাদেশ থেকে অত্যন্ত মানসম্মত ও বৈচিত্রপূর্ণ পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতে পারে।’

বাংলাদেশের পাট ও বস্ত্র শিল্পে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে সাখাওয়াত হোসেনে বলেন, ‘পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে পুরো বিশ্বেই পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল ও বস্ত্র কলগুলোতেও বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি আশা করব, সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাংলাদেশের পাট ও বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ করবে।’

উপদেষ্টার এ আহ্বানকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রদূত উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে লিখিত প্রস্তাব দেয়ার অনুরোধ করেন।

আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদির নেতৃত্বে বৈঠকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্বে) সঞ্জয় কুমার বণিক উপস্থিত ছিলেন।