কুমিল্লা: ঝাঁকে ঝাঁকে চড়ুই পাখি। যেন পাখিদের মিলন মেলা। দল বেধে উড়ে এসে বসে বরই গাছের ডালপালায়। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা ভরে ওঠে চড়ুই পাখিতে। আর তাদের কিচিরমিচির শব্দে মুখর থাকে পুরো এলাকা। প্রতিদিন বিকাল হলেই হাজার হাজার চড়ুই পাখি কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডস্থ হোটেল নুরজাহানের বরই গাছে দলবদ্ধ হয়ে চড়ুই পাখিরা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।
আগের মত বাসা-বাড়ির জানালা বা ছাদে এখন আর চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না। তবে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন কুমিল্লার হোটেল নূরজাহানে গিয়ে দেখা মিলেছে, এ চড়ুই পাখির এক অপরূপ দৃশ্য। সূর্য ডোবার আগ মুহূর্তে সেখানে বসে চড়ুই পাখির মেলা। আলো-আঁধারে গাছে গাছে খেলায় মেতে ওঠে পাখির দল। কিচিরমিচির শব্দে চারপাশকে জাগিয়ে তোলে হাজারো পাখি। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকেন যাত্রাবিরতি নেয়া দূরপাল্লার বাসের শত শত যাত্রী। গেল ৭-৮ বছর ধরে হোটেলটির গাছে অন্তত পাঁচ সহস্রাধিকেরও বেশি পাখি রাত্রী যাপন করে নিরাপদে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সূর্যাস্তের পর থেকে দলবেঁধে ছুটে আসে হাজার হাজার চড়ুই পাখি। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তাদের কিচিরমিচিরে মুখর থাকে মহাসড়ক সংলগ্ন সদর দক্ষিণ উপজেলার হোটেল নূরজাহান এলাকা। ছোট্ট একটি বরই গাছের পাতার চেয়ে যেন চড়ুই পাখি বেশি। একেকটি ডালে বসে আছে শত শত পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দ আর লাফালাফিতে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করেন হোটেলে যাত্রা বিরতিতে আসা দূর গন্তব্যের যাত্রী ও স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেল ৫-৬ বছর ধরে হঠাৎ বরই গাছসহ এ এলাকায় বেশ কয়েকটি গাছে রাতের বেলা পাখিদের বসতি গড়তে দেখা যায়। প্রথম দিকে এর সংখ্যা কম থাকলেও ক্রমেই বাড়তে থাকে এ সংখ্যা। তাদের ধারণা, সব মিলিয়ে এখানে রাত্রি যাপন করে অন্তত পাঁচ হাজারের অধিক চড়ুই পাখি। মানুষের দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় দিন দিন এর সংখ্যা বাড়ছে।
মোজ্জামেল হোসেন নামে দূরপাল্লার বাসের এক যাত্রী বলেন, ‘যাত্রা বিরতিতে আমি যখনই এ হোটেলে আসি, তখনই মুগ্ধ হয়ে পাখিগুলো দেখতে থাকি। এদের কিচিরমিচির ডাকে আমি মুগ্ধ হই। সরকারিভাবে পাখিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করলে লাখো পাখির নিরাপদ আশ্রয়ের স্থান হতে পারে।’
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম সোহেল বলেন, ‘প্রতিদিন কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাখি দেখার জন্য বিকলের পর থেকে ভিড় জমান পাখি প্রেমীরা। অনেক সময় ছবি ও ভিডিও করতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের। ছোট্ট একটি গাছে হাজার হাজার পাখি দেখে তারা মুগ্ধ হন।’
তার দাবি, এদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারিভাবে যেন উদ্যোগ নেয়া হয়।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিস ঘোষ বলেন, ‘হোটেল নূরজাহানে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসার বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। এরইমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি, পাখিদের আশ্রয়স্থল চিহ্নিত করে বেশি করে গাছ লাগানোর। সচেতনতামূলকভাবে গাছে গাছে প্লেকার্ড ঝুলিয়ে দেয়া ও পাখিদের যেন কোন প্রকার ক্ষতি করা না হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয়দের আবগত করার পরিকল্পনা রয়েছে।’