ঢাকা: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে চীন ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। মঙ্গলবার (২ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্রের খবর মাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।
আব্দুর রউফ তালুকদার জানান, ঋণের অর্থ চীনা মুদ্রা ইউয়ানে গ্রহণ করা হবে। এ অর্থ চীন থেকে পণ্য আমদানির খরচ মেটাতে ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। ঋণের আলোচনা এখনো কারিগরি পর্যায়ে রয়েছে।
চীনের সাথে বাংলাদেশের শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও চীন। তবে, দেশটি থেকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির পরিমাণ রপ্তানির তুলনায় অন্তত দশ গুণ বেশি। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে বলে মনে করা হয়। ২০২৩ সালে চীন থেকে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ‘আমরা যদি এ ঋণ পাই, এটি আমাদের দুইটি উপায়ে সাহায্য করবে: আমরা ইউয়ানে কিছু চীনা পেমেন্ট নিষ্পত্তি করতে পারব; দ্বিতীয়ত, এটি আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ, ইউয়ান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) অনুমোদিত একটি রিজার্ভ মুদ্রা।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে, করোনাভাইরাস মহামারির সময় থেকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। গার্মেন্টস পণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়া ও ভোগ্যপণ্যের মূল্য ক্রমাগত বাড়তে থাকাকে এর প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়।
গেল বছর আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরও রপ্তানি খাত চাপের মধ্যে রয়েছে ও আমদানিকারকরা ডলার পেতে সমস্যায় পড়ছেন। ক্রমাগত রিজার্ভ কমায় গেল মে মাসে বাংলাদেশের ক্রেডিট স্কোর আরো কমিয়েছে ফিচ রেটিংস।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গেল ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল দুই হাজার ১৮০ কোটি ডলার, যা দিয়ে আড়াই মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। ২০২৭ সালের জুন মাসের মধ্যে আমদানি খরচ মেটানোর সক্ষমতা তিন দশমিক ছয় মাসে নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে আইএমএফ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। কারণ, এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর কথা রয়েছে।
আব্দুর রউফ তালুকদারের মতে, যুক্তরাষ্ট্র সুদের হার কমালে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল বাজারে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। অন্য দিকে, ভোগ্যপণ্যের মূল্যও প্রাক-করোনা পর্যায়ে ফিরে আসবে, এর ফলে আমদানি খরচ মেটাতে ডলারের চাহিদা কমবে।
আগামী সপ্তাহে চীন সফরে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে ঋণের ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।