ঢাকা: ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আপনারা মাইক ধরলে ছাড়েন না। পরে কে বলবে, খেয়াল থাকে না। নিজেদের সুশৃঙ্খল করুন, সুসংগঠিত করুন। কথা শুনবে না, এ ছাত্রলীগ আমাদের দরকার নেই। অপকর্ম করবে এ ছাত্রলীগ দরকার নেই।’
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দীর্ঘ চার বছর পর অনুষ্ঠিত ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটাই কি ছাত্রলীগ! কোন শৃঙ্খলা নেই! পোস্টার নামাতে বলছি, নামায় না!’
তিনি বলেন, ‘সব নেতা, তাহলে কর্মী কোথায়! এত নেতা স্টেজে, কর্মী কোথায়? এ ছাত্রলীগ আমরা চাই না। শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ, এ ছাত্রলীগ নয়। মুজিব কোট পরলেই মুজিব সৈনিক হওয়া যায় না। মুজিব সৈনিক হতে হলে মুজিবের আদর্শের সৈনিক হতে হবে। শেখ হাসিনার খাঁটি কর্মী হতে হবে। খাঁটি কর্মী বিশৃঙ্খলা করে না। সব নেতা হয়ে গেছে! দুর্নামের ধারা থেকে ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে–এটাই হোক আজকে অঙ্গীকার।’
নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শেষ হল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার যৌথ সম্মেলন। দেরি করে আয়োজন শুরু, কর্মীদের বিশৃঙ্খলতা, কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ না পাওয়াসহ নানা অনিয়মে আয়োজকদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ছেড়েছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতা।
ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলনে আয়োজকদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ছাড়েন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক।
সকাল দশটায় সম্মেলন উদ্বোধনের কথা থাকলেও এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। জাতীয় ও দলীয় সংগীত, দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সকাল ১১টার নাগাদ সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
দীর্ঘ এক ঘণ্টায় মহানগরের বিদায়ী কমিটির চার নেতা বক্তব্য দেন। এরপর মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু জুমার নামাজের কারণে তখন প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেন।
এ সময় বক্তব্য দিতে না পেরে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের চার নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন। এ ছাড়া বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান নি আমন্ত্রিত অতিথি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মদ মোহাম্মদ মান্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যও বক্তব্য দিতে পারেন নি।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহানগর কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও গত তিন বছর করোনার কারণে সময়মত অনুষ্ঠিত হয় নি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের সম্মেলন।
এ দিকে, আগামী ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে।