চৌধুরী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম: নির্বাচনের আগে রাজনীতিতে গরম হাওয়া বইবে এটাই স্বাভাবিক। ছোট-বড় দলগুলো সক্রিয় হয়ে উঠবে। নির্বাচনের নির্ধারিত সময়ের বছর খানেক আগে রাজনীতিতে তেমন পরিস্থিতিই তৈরি হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একং বিএনপি সভা সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথ দখলে রাখার চেষ্টা করছে। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ নিয়ে পুরো দেশ অস্থিরতায় ডুবে ছিল।নির্দলীয় নাকি সরকারের অধীনে নির্বাচন- এ নিয়ে দুই দলের চলছে সংঘাত।
নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অবস্থান দুই মেরুতে। দুই দলই নিজেদের মতে অনড়। ক্ষমতাসীন সরকারী দল ১৪ বছরের উন্নয়ন এবং বিএনপি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যতের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিসহ সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে। ২০২৩ সাল নতুন বছরে সবাই মিলে বসে দেশকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করাটা ছিল স্বাভাবিক। কিন্ত সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকটের কারণে নতুন বছরটি দেশেবাসীর জন্য মোটেও সুখকর হবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে দুই দলের কর্মসূচিতে প্রাণহানির মত ঘটনায় রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আগামীতে যদি দুইটি দল লাঠি-বৈঠা হাতে নিয়ে অতীতের মত রাজপথে নেমে যায়, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে পুরোনো প্রাণঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তা দেশ ও জনগণের জন্য কখনো সুখকর হবে না।
বাংলাদেশে নির্বাচনের আগের ও পরের বছর সংঘাত ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। ২০২৩ সাল এক দিকে বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের বছর, অন্য দিকে, নির্বাচনী মল্লযুদ্ধের বছর। এমনিতে গত কয়েক বছর ধরে দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি। এখন দেশে যদি চলমান রাজনৈতিক সংঘাত আরো খারাপের দিকে যায়, তাহলে দেশের সার্বিক অবস্থা আরো করুণ হবে। এ সময় দেশের জান-মালের ব্যাপক ক্ষতিসহ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়বেন।। তাই নির্বাচন নিয়ে যে কোন সমাধান আলোচনার টেবিলে বসে করা উচিত। তাছাড়া ‘খেলা’ হবে এটি কোন রাজনীতি সুলভ কথা নয়। রাজনীতিবিদরা জনগণকে নিয়ে খেলবেন, তা কখনো কাম্য নয়। রাজনীতি জব্বারের বলি খেলা নয়। জনগনও দাবার গুটি নয়। প্রধান দুইটি দলের সমর্থকেরা চর দখলের মত মারামারি ও খুনাখুনীতে জড়াবেন, তা কখনো দেশরে মানুষ কামনা করে না।জনগণের চাওয়া, একটি নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন। এখন রাজনীতিবিদরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠ নির্বাচন পদ্ধতি ঠিক করবেন। রাজনীতি যদি জনকল্যাণে হয়, তাহলে রাজনীতিবিদরা জনগণের ক্ষতি হয়- এমন কোন পন্থা অবলম্বন করবেন না।
রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে, যুগ পাল্টেছে। মানুষের বুদ্ধিমত্তা ও মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে। তাদেরকে জনগণের পালস বুঝতে হবে।মানুষ এখন আর আগের মত নেতাদের ডাকে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। তাই রাজনীতিবিদরা সাময়িক ক্ষমতার লোভে কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিবেন না। কারণ যুগে যুগে হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
লেখক: গণ মাধ্যম কর্মী, চট্টগ্রাম