সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

জনগণের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক তিস্তা প্রস্তাব গ্রহণ করবে সরকার

মঙ্গলবার, জুন ২৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
শেখ হাসিনা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তার সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ ও জনগণের জন্য যে প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি লাভজনক, তা গ্রহণ করবে। আমরা তিস্তা প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন ও ভারত আলাদা আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের দেশের জনগণের জন্য কোন প্রস্তাবটি অধিক লাভজনক ও উপযোগী হবে, সেটাই আমরা গ্রহণ করব।’

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক দ্বিপাক্ষিক ভারত সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে চীন আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও দিয়েছে। আরো প্রস্তাব এসেছে। অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব, কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে তা আমার দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে, সেটাই আমি গ্রহণ করব। কোন্ প্রস্তাবটা নিলে কতটুকু ঋণ নিলাম এবং কতটুকু আমাদের পরিশোধ করতে হবে, কতটুকু দিতে পারব- এসব কিছু বিবেচনা করেইতো আমাদের করতে পরিকল্পনা নিতে হবে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে ভারত যেহেতু বলেছে, তারা করতে চায় ও টেকনিকেল গ্রুপ বানাবে, তারা অবশ্যই আসবে। আমরা যৌথভাবে সেটা দেখব। চীন একটা সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। ভারতও একটা করবে ও এটার পর আমাদের কাছে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রহণযোগ্য ও লাভজনক মনে হবে, আমরা সেটাই করব।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেহেতু ভারতের কাছে আমাদের তিস্তার পানির দাবিটা বহু দিনের, সেক্ষেত্রে ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রকল্পটি করে দেয়, তবে আমাদের সব সমস্যারই সামাধান হয়ে যায়। তাহলে, সেটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজ হল- আপনারা নিজেরাই বিবেচনা করে দেখেন। কাজেই ভারত যখন এগিয়ে এসেছে, আমরা এটাই মনে করি যে, ভারতের সঙ্গে যদি আমরা এ তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করি, তাহলে আমার দেশের পানি নিয়ে প্রতিদিন সমস্যায় পড়তে হবে না। আমরা সেই সুবিধাটা পাব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের দিয়ে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব ও কারো সাথে বৈরিতা নয়,’ এর প্রসঙ্গ টেনে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমিতো এখানে কোন সমস্যা দেখি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন আমাকে তার শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার দাওয়াত দিলেন, আমরা গেলাম। তারপর তিনি রাষ্ট্রীয় সফরের দাওয়াত দিলেন, সে সফরও করে আসলাম। চীন আমাকে দাওয়াত দিয়েছে, আমি চীনে যাব। আমার বাংলাদেশ সার্বভৌম দেশ ও সবার সাথে বন্ধুত্ব নিয়েই আমি চলব। কার কি সমস্যা সেটা তাদের সাথে থাক আমার নয়, আমার দেশের মানুষের কতটুকু উন্নতি করতে পারি, সেটাই আমার লক্ষ্য।’

‘ভারত বাংলাদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তারাও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল।’

শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২১ ও ২২ জুন নয়াদিল্লি সফর করেন।
লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট টানা তৃতীয় বারের মত সরকার গঠন করার পর ভারতে কোন সরকার প্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। এছাড়াও, এ সফরটি ছিল ১৫ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে ভারতের রাজধানীতে শেখ হাসিনার দ্বিতীয় সফর। কারণ, তিনি ৯ জুন মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত বিশিষ্ট জনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের সমস্যা রয়েছে। সমস্যা থাকলে সমাধানও আছে।’

গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি ২০২৬ সালের শেষ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি চুক্তিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নবায়ন নাও করা হয়, তাহলেও তা অব্যাহত থাকবে।’

তিস্তা ও গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের ব্যাপারে ভারত সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আপত্তি উত্থাপন সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবেন না। কেননা এটা তাদের (ভারত) অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু, ভারতের সব রাজনৈতিক দল এবং প্রধানমন্ত্রী নেরেন্দ্রে মোদী ও মূখ্য মন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সাথে সকলের সম্পর্ক ভাল। মমতা ব্যানার্জির সাথেও সম্পর্ক ভাল, আবার প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সাথেও। অন্যান্য সব দলের সাথেও আমার সম্পর্ক ভাল। ভারতের দল মত নির্বিশেষে সকলের সাথে আমার একটা সুসম্পর্ক আছে।’

বাংলাদেশের ভেতরে দিয়ে ভারতের রেল চলাচলের সুযোগ দেয়ার নামে দেশকে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটা দেশের মধ্যে অন্য দেশের ট্রানজিট দিলে ক্ষতি কি?’
তিনি বলেন, ‘রেল যেগুলো বন্ধ ছিল (ভারতের সাথে) সেগুলো ধীরে ধীরে খুলে দিচ্ছি। অর্থনীতিতে এটা বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশে কী চারদিকে দরজা বন্ধ করে থাকব? ইউরোপের দিকে তাকান সেখানে, কোন বর্ডার নেই। সেখানে কী এক দেশ আরেক দেশের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ আমরা স্বাধীন করেছি। যারা সমালোচনা করে তাদের জানা উচিত, একটি মাত্র মিত্র শক্তি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে ট্রেনিং পেয়েছে। পৃথিবীতে যারা মিত্র শক্তি, যারা যুদ্ধে সহযোগিতা করে, তারা কিন্তু ওই দেশ ছেড়ে কোন দিন ফেরত যায়নি। এখনো জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা, জার্মানিতে রাশিয়ান সেনা রয়েছে ও বিভিন্ন দেশ দেখলে সে দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। সেখানে ভারত কিন্তু ব্যতিক্রম।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত মিত্র শক্তি হিসেবে আমাদের পাশে থেকে যুদ্ধ করেছে। কিন্তু, যখনই শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছেন তারা (ভারতের সেনা) দেশে ফেরত যাক, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সাথে সাথে রাজি হয়েছেন ও তাদের ফেরত নিয়ে গেছেন। এরপরও যারা বলে ভারতের কাছে দেশ বিক্রি হয়ে যাবে? সে বিক্রিটা হয় কিভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন। আসলে যারা এটা বলে তারা নিজেরাই ভারতের কাছে বিক্রি হয়ে আছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, যখনই মিলিটারি ডিক্টেটররা (সামরিক স্বৈরাচার) ক্ষমতায় এসেছে- জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, তারা ওপর দিয়ে ভারত বিরোধী কথা বলেছে, আর ভারতে গিয়ে সেখানে পা ধরে বসে থেকেছে। এগুলো আমার নিজের দেখা, জানা। কাজেই এ ধরনের কথা বলার কোন অর্থ হয় না।’

‘ছোট ভূখন্ডের হলেও আমরা স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সেই স্বার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই আমরা কাজ করছি। আজকে আমরা এ যেসব যোাগাযোগ ব্যবস্থা সব খুলে দিলাম, তাতে সব থেকে বেশি লাভবান হবে আমাদের দেশের মানুষ। তাদের যোগাযোগ করতে হয়, যেতে হয়। চিকিৎসার জন্য যায়, পড়াশোনার জন্য যায়, অন্যান্য কাজে যায়, হাট-বাজার করতে যায়, আজমীর শরিফসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা যাতায়াত করে। সেক্ষেত্রে আমাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রটাওতো আরো উন্মুক্ত হবে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা এ দেশ বিক্রি করে না। কারণ, আমরা এদেশ স্বাধীন করেছি, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। আর যে কষ্টটা আমরা ভোগ করেছি, সেটা আমরা জানি। যারা বিক্রির কথা বলছে তারা ’৭১ পাকিস্তানের দালালি করেছে বলেও তিনি সন্দেহ ব্যক্ত করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার এ দুইটি দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত ভারত সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো উন্নত করবে। এ সফর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, ‘তার সরকার আরো সাতটি বর্ডার হাট করবে এবং কানেকটিভির উন্নয়নে বিবিআইএন করেছে এবং এখন যেতে খুব একটা সমস্যা হয় না, অনেকেই কিন্তু যাতায়াত করছে।’