চট্টগ্রাম: ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাজেটে জলবায়ু বরাদ্দ বাড়াতে হবে, সামাজিক নিরাপত্তা, জলবায়ু সহনশীল কৃষি, জীবাশ্ম জ্বালানী কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানী, খালখনন, পাহাড়কাটা রোধ, বর্জ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রয়োজন। রাইটস-টু-এনভায়রনমেন্ট বাদ দিয়ে রাইটস-টু-ডেভেলপমেন্ট সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। উন্নত বিশ্বের অপরিনামদর্শী উন্নয়ন ভাবনার কারণে আজকে ক্লাইমেট জাস্টিস বিঘ্নিত হচ্ছে। অকৃষি কাজে কৃষিজমি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। উন্নয়নের মডেল হবে স্থায়ীত্ব। সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় নিরপেক্ষ এনভারমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট জরুরী প্রয়োজন। পৃথিবীতে ২৫ শতাংশ মানুষ পানি সংকটে আছে। পানির কারণে রাজনৈতিক সহিংসতা দেখা যেতে পারে। শুধু নগর জলাবদ্ধতা নয় গ্রামাঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিয়েও আমাদের পরিকল্পনা করা জরুরী। ক্লাইমেট রেসিলিয়ান্ট টেকনোলজি ইউজ করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) বাস্তবায়ন করতে হবে।’
শনিবার (১৯ আগস্ট) উন্নয়ন সংস্থা ঘাসফুল আয়োজিত বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন: আমাদের প্রস্তুতি” শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। ঘাসফুলের চেয়ারম্যান ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরী।
স্বাগত বক্তব্যে সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আফতাবুর রহমান জাফরী জলবায়ু পরিবর্তনে সংস্থার গৃহীত কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে সংযুক্ত সকলকে স্বাগত জানান।
ওয়েবিনারে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের সব সাংসদকে নিয়ে চট্টগ্রামের বিরাজমান সংকট ও সমস্যাগুলো নিয়ে একটি সমন্বয় সভা প্রয়োজন। আমাদের সংবিধান সংশোধনী; ৮/‘ক-তে পরিবেশের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, এ বিষয়ে অবহেলা করে উন্নয়ন পরিকল্পনা করার সুযোগ নেই। তাপমাত্রা এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের সচেতন না হয়ে উপায় নেই। আমরা বার বার প্রকৃতিকে আঘাত করছি, প্রকৃতি প্রতিশোধ নিবে না-তাতো ভাবা যায় না। সুতরাং, আজকের উন্নত বিশ্ব প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা জরুরী। জলবায়ু পরিবর্তন স্থির নয়, ক্রমপরিবর্তনশীল। জলবায়ু পরিবর্তনের যে গতি, তার থেকে দ্রুতগতিতে আমাদের সমাধানের পথ বের করতে হবে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এখানে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের কাজ করতে হবে। নগরায়ন বৃদ্ধি ও কার্বণ নিঃসরণ বাড়ছে, পাহাড়, বন ধ্বংস করা হয়েছে, তাপমাত্রা বাড়ছে, ঋতু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, দুর্যোগ বাড়ছে, কৃষিতে সমস্যা হচ্ছে। আমাদের ক্লাইমেট নিউট্র্রাল ইকোনমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গ্রীণ এন্ড ক্লীন ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট তৈরিতে মনোযোগ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের নাজুকতা উল্লেখযোগ্য।’
মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হালদা নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে ৮পিপিটি হয়েছে। উত্তরবঙ্গে নারীদের প্রজননস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলায় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, সুশীল সমাজসহ অন্যান্য বৃহৎ স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করা উচিত।’
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, এডিবির রিসোর্স পার্সন ও সাবেক সচিব সুলতানা আফরোজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর (অব.) ড. মোহাম্মদ আলী আজাদী, বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. একেএম সাইফুল ইসলাম, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমাদ।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান স্থপতি আশিক ইমরান, ফোরাম ফর প্ল্যান্ড চট্টগ্রামের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায়, আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. ছাদেকুল আলম, চবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি ড. মো. আলী হায়দার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) ড. ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায় প্রকৌশলী মো. মাহাবুবুল আলম, ঘাসফুলের নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ বিশিষ্ট কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব কেএএম. মাজেদুর রহমান, জলবায়ু সংগঠক শরিফ চৌহান, চবির ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের শিক্ষার্থী প্রতীক দত্ত।
ওয়েবিনারটি ঘাসফুলের ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার হয় ও বক্তাদের অভিমতের উপর ভিত্তি করে ছয়টি সুপারিশ গৃহীত হয়।
ওয়েবিনারে সংযুক্ত ছিলেন ঘাসফুলের নির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহানা বেগম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য পারভীন মাহমুদ, প্রফেসর ড. জয়নাব বেগম, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটউট বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. আহমেদ ইশতিয়াক আমিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) প্রকৌশলী মো. আবু ঈসা আনছারী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সহকারী প্রধান (পরিবেশ ও প্রতিবেশ) সাকিব মাহমুদ, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক (শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ উইং) মো. মঈনুদ্দিন খান, উপকূলীয় বন বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ছাইফুল্লাহ মজুমদার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সহ. ম্যানেজার (এস্টেট) মুহাম্মদ শিহাবউদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, অংশীজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ ঘাসফুলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।