সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সভা: বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি; মইনুলকে বহিষ্কার

শুক্রবার, জুন ১৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: নানা ঝামেলা-সংকট ও কঠিন নিরাপত্তার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে সিলেটের অধিবাসীদের বড় সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাধারণ সভা। এতে সংগঠনের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে বহিষ্কারের পাশাপাশি ‘জালালাবাদ ভবন’ কেনার নামে অর্থ আত্নসাতের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ দিকে, সাধারণ সভায় প্রবেশের সময় সভাস্থলে প্রবেশমুখে সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে দেহ তল্লাসীর ঘটনায় জালালাবাদবাসীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবশ্য অপ্রীতিকর এ ঘটনার জন্য সাধারণ সভায় সভাপতি বদরুল হোসেন খান দু:খ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘জালালাবাদবাসীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ জন্য প্রায় ডজন প্রাইভেট সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও, পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।

আগের ঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক রোববার (১১ জুন) সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে সন্ধ্যা ছয়টার স্থলে সাড়ে সাতটার দিকে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে এসোসিয়েশনের সদস্যদেরকে হলে প্রবেশমুখে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে দেহ তল্লাসী করে ভিতরে ঢুকানো হয়। এরই মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান শেফাজ সভাস্থলের ভিতরে ঢুকলে তাকে বের করে দেয়া ও সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী সিকিউরিটি কর্তৃক প্রবেশমুখে দেহ তল্লাসীর ঘটনায় জালালাবাদবাসী একটি অংশের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। দেখা দেয় উত্তেজনা। পাশাপাশি, কুইন্স প্যালেসের সামনে কিচু ভিন দেশীর হাতে ‘জালালাবাদ ভবন চাই’, ‘বিভক্তি নয়, ঐক্য চাই, জালালাবাদ ভবন চাই’ প্রভৃতি প্লাকার্ড/ব্যানার হাতে অবস্থান নেয়ার ঘটনায় অনেকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

এ দিকে, সাধারণ সভা শুরুর প্রাক্কালে এসোসিয়েনের ইসি কর্তৃক অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম নিজেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবি করে সভা পরিচালনা করতে চাইলে সভাপতি বদরুল হোসেন ও তার পরিষদ বাধা দিলে চরম হট্টগোল আর বাকবিতন্ডা শুরু হয়। পাল্টা-পাল্টির বাকবিতন্ডা আর হাতাহাতির এক পর্যায়ে সিকিউরিটির সদস্যরা মইনুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের সভা স্থল থেকে বের করে দেয়। পরবর্তী এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে সাধারণ সভার কার্যক্রম শুরু হয় ও সভা পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম।

সভায় সংগঠনের সবেক সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, এসোসিয়েশনের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য কওছারুজ্জামান কয়েস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জুনেদ খান, মিসবা আহমেদ, আব্দুল হাসিব মামুন, আহমেদ জিল্লু ও আতাউর রহমান সেলিম এবং প্রবীণ প্রবাসী ছদরুন নূর সভা মঞ্চে ছিলেন। সভার শুরুতে কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর বিশেষ দোয়া করেন এসোসিয়েশনের সাবেক কর্মকর্তা জামিল আনসারী। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের প্রস্তাবনায় সদ্য প্রয়াত সংগঠনের সাবেক সভাপতি জন উদ্দিনের স্মরণে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সময় সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির সবেক সভাপতি কামাল আহমেদসহ মারা যাওয়া এসোসিয়েশনের কয়েক কর্মকর্তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হয়।

পরবর্তী সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন যথাক্রমে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ আলিম উদ্দিন। উভয়ের রিপোর্টে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এরপর রিপোর্ট দুটি নিয়ে আলোচনার সময় বিভিন্ন ইস্যু ও বক্তব্যে একাধিক বার উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও ফের তা প্রশমিত হয়।

সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের প্রতিবেদনসহ ভবন ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন মস্তফা কামাল, মাসুদুল হক সানু, মকবুল রহিম চুনুই, গৌস খান, আব্দুর নূর বড় ভূইয়া, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, মিয়া মোহাম্মদ আফজাল, শেখ আতিকুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মওলানা রশীদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, মিজানুর রহমান মিজান, জামিল আনসারী, সাইকুল ইসলাম, জামাল হোসেন।

ছদরুন নূর ছাড়া সভা মঞ্চের সকলেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকরা ‘জালালাবাদ ভবন’ সমস্যার সমাধানে ছয় সম্পাদকের নেয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার ব্যাখা দেন।

সবশেষে বদরুল হোসেন খান জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বর্তমান পরিস্থিতি ও অব্যহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেন। এরপর তিনি গঠনতন্ত্রের ধারা নয় মোতবেক মইনুল ইসলামকে এসোসিয়েশন থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করতে উপস্থিত সদস্যরা হাত তুলে তার প্রস্তাব সমর্থন করেন। মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাহিষ্কারের প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর তিনি ঘোষণা দেন যে, এ সিদ্ধান্ত আগামী ২৫ জুন থেকে কার্যকর হবে ও মইনুল ইসামের কাছে পাওনা অর্থ উদ্ধারের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং এসোসিয়েশনের আত্নসাৎকৃত অর্থ ফেরত না দেয়া পর্যন্ত সংগঠনের অর্থে কেনা ‘জালালাবাদ ভবন’ যাতে কেনা-বেচা করতে না পারে, তার আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ঘোষণা দেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সভা শেষ হয়।

বলে রাখা ভাল, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ৩৮ বছরের ইতিহাসে এর আগে সিকিউরিটি গার্ডদের উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও এর আগে কখনো সিকিউরিটি দিয়ে দেহ তল্লাসীর ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় প্রায় সব বক্তাই ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন এর সমালোচনা করেন।

রোববার পাল্টা সাধারণ সভা: এ দিকে, কুইন্স প্যালেসের ভিতরে যখন সাধারণ সভা চলছিল, তখন মিলনায়তনের বাইরে ‘বদরুল-হাকিম’ আহুত সাধারণ সভাকে অবৈধ সভা উল্লেখ করে ইসি কর্তৃক অব্যাহতিপ্রাপ্ত মইনুল ইসলাম বদরুল হোসেন খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা এবং আগামী রোববার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ছয়টায় কুইন্স প্যালেসে ‘জালালাবাদ ভবন’-এ পাল্টা সাধারণ সভা আহবান ঘোষণা দেন। মইনুল ইসলাম আহুত রোববারের সাধারণ সভার প্রতি একাত্ততা প্রকাশ করেছেন এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ ও সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউল গণি আসাদসহ আজিজুর রহমান সাবু, আব্দুল হাসিম হাসনু, শাহাবউদ্দিন, সৈয়দ জুবায়ের আলী, দরুদ মিয়া রনেল, আব্দুল করীম চৌধুরী।