ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: চলতি বছরের গেল জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার কমেছে। সে কারণে দেশটির বেকারত্বের হারও বেড়েছে। তবে, সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটিতে গেল মাসে দেশটির নিয়োগকর্তারা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান করেছেন। সংবাদ বিবিসির।
নিয়োগকর্তারা জুন মাসে দুই লাখ ৬ হাজার জনের নয়া কর্মসংস্থান করেছেন। এর পূর্বে, গেল মে মাসে দেশটিতে দুই লাখ ৭২ হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে, সেখান থেকে বিশ্লেষকদের প্রত্যাশা ছিল, জুন মাসে নতুন করে দুই লাখ ১৮ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু, প্রকাশিত প্রতিবেদনে তাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
কর্মসংস্থান কম হওয়ায় সঙ্গত কারণেই জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার সামান্য বেড়ে চার দশমিক দশ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ের মধ্যে দেশটিতে মজুরি বৃদ্ধির হার গত তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর ছিল।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘সর্বশেষ পরিসংখ্যানটি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমকে চলতি বছরের শেষের দিকে সুদহার কমানোর এক ধাপ কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।’
অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি জুনে এক লাখ ৯০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাধীন সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংস্থা বোওয়ারস্টক ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রধান নির্বাহী এমিলি বোওয়ারস্টক হিল বলেছেন, ‘পরিসংখ্যানগুলো ‘তুলনামূলকভাবে অনুকূল’। এ পরিসংখ্যান দেশটির বাজারকে সতর্ক করার জন্য যথেষ্ট খারাপ নয় ও ফেডের (ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম) উদ্বিগ্ন হওয়ার মতও যথেষ্ট খারাপ নয়।’
এমিলি বোওয়ারস্টক আরো বলেন, ‘ফেড ‘খুব স্পষ্টভাবে টেলিগ্রাফ করেছে যে, এ বছর তারা একটি ‘কাট’ (সুদহার হ্রাস) আশা করছে।’
চলতি বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার ফের পাঁচ দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। ব্যাংকটি গেল বছরের জুলাই থেকেই এ পরিসরের সুদহার বজায় রেখেছে।
গেল বুধবার (৩ জুলাই) প্রকাশিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বৈঠকের কার্যবিবরণীতে নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির গতি মন্থর হচ্ছে ও জিনিসপত্রের ‘দামের চাপ কমছে’।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজারগুলো দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম) সেপ্টেম্বরের বৈঠকে সুদহার কমানোর প্রায় ৭২ শতাংশ সম্ভাবনার ওপর বাজি ধরছে এবং ডিসেম্বরে দ্বিতীয় বার সুদহার কমানোর ক্রমবর্ধমান সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম নির্ধারণ করছেন।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বাজার (ফিন্যান্সিয়াল মার্কেট) হল এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে আর্থিক সম্পদ যেমন- স্টক, বন্ড, ডেরিভেটিভ ও মুদ্রা, ক্রয়-বিক্রি ও লেনদেন করা হয়।
তবে, জুন মাসে কর্মকর্তারা মার্চের পূর্বাভাস বাতিল করে দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছিল, চলতি বছরে সুদের হার এক শতাংশের তিন-চতুর্থাংশ পয়েন্ট কমে যাবে। এর অর্থ হল এবার গ্রীষ্মে শুরু হয়ে ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত সুদের হার কমানো অব্যাহত থাকত।
জুন মাসে মূল্যবৃদ্ধির হার প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ‘স্থিতিশীল’ থাকায় ও কর্মসংস্থানের বাজার শক্তিশালী বলে ইঙ্গিত দেয়া বিভিন্ন তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে, ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। এখন তারা মনে করছে, এ বছর সুদের হার কেবল এক বার, মাত্র একটি কোয়ার্টার পয়েন্ট কমানো হবে।
পৃথিবীজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সাধারণত সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে ফেডের পথনির্দেশ অনুসরণ করে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার কমানোর ফলে অন্য দেশগুলোতেও সুদহার কমতে পারে। যদিও, মে মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর অ্যান্ড্রু বেইলি বলেছেন, ‘এমন কোন আইন নেই যে, ফেডকেই (সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে) প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।’