নিউইয়র্ক সিটি, যুক্তরাষ্ট্র: সম্প্রতি হামলার শিকার হওয়া নির্দিষ্ট কোন মাজার, নির্দিষ্ট কোন দরবারের বিষয়ে না বললেও সামগ্রিকভাবে এসব ভাঙার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ‘নীতিগত প্রতিবাদ’ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত টকশো ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে নিজ দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। এ আলোচনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) খালেদ মুহিউদ্দীন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাজার ভেঙে ফেলছে দুর্বৃত্তরা। ‘তৌহিদি জনতার’ কথা বলে আক্রমণ করা হচ্ছে বিভিন্ন পীরের দরবার। এসব কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না তাদের দল।’
তিনি আরো যোগ করেন, ‘আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার, দ্বীনের ব্যাপারে কোন বাড়াবাড়ি চলবে না। কোন মানুষের ওপর কারও আদর্শ চাপিয়ে দেয়ার অবকাশ নেই। জোর করে কোন কিছু প্রয়োগ করা আমরা পছন্দ করি না। আইন হাতে তুলে নেয়াকে আমরা সমর্থন করি না।’
বাংলাদেশে ইসলামের আদর্শ সামনে রেখে শুধু জামায়াতে ইসলামী নয়, আরো কিছু রাজনৈতিক দল সক্রিয়। তাদের কারো কারো সঙ্গে জামায়াতের বিরোধও আছে, সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কোন দলটিকে প্রকৃত ইসলামভিত্তিক দল হিসেবে গ্রহণ করবে- খালেদ মুহিউদ্দীনের এমন প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটি পরিবারে একাধিক সদস্য থাকেন। তাদের সকলের মত এক হয় না। তার পরও পরিবার চলে। পরিবার ভেঙে যায় না। মতের ভিন্নতা থাকবে, এটাও সৌন্দর্য। ভিন্নতা যখন থাকে, তখন বৈচিত্র্য চিন্তা করার সুযোগ থাকে।’
তিনি দাবি করেন, এমন ভিন্নতা সব ধর্মেই থাকে। তবে যারা সত্যিকারের ইসলামের অনুসারী, তারা এক কোরআন মানেন, এক আল্লাহ মানেন, এক রাসুল মানেন- এ তিন জায়গায় কোন দ্বিমত নেই। বাকি জায়গায় একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে।
গেল ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। সেদিন দুপুরেই সরকার পতনের এক দফা দাবিতে মাঠে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান। তাতে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতের আমির। অথচ তখনো হাসিনা সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল তারা।
সেনাপ্রধান কখন তাদের সাথে যোগাযোগ করেন- এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, ‘৫ আগস্ট দুপুরে ফোন আসে সেনাবাহিনী থেকে। এর আগে তাদের সাথে যোগাযোগ ছিল না।’
এমনকি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাথে সেদিনই প্রথম সরাসরি দেখা হয়, দাবি করেন জামায়াত প্রধান।
একটি ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠনের নেতাকে সেনানিবাসে যেতে বলা হচ্ছে, ব্যাপারটি তো ফাঁদও হতে পারত, এমন শঙ্কা ছিল কি না- জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এটা মনে হতেই পারে। কিন্তু, আমি মনে করিনি। সরকার আচানক ১ আগস্ট আমাদের যখন নিষিদ্ধ করে, আমরা সেটা গ্রহণ করিনি, সাথে সাথে বর্জন করি। সকলে আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের সকলে নিন্দা করেছে। কারণ, এটা ছিল ইস্যু ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার কৌশল। এটা কেউ গ্রহণ করেনি। কাজেই সেনাপ্রধানের দাওয়াত আমরা অস্বাভাবিক মনে করিনি।’
রাজনীতির পথে চলতে কখনো আওয়ামী লীগের সাথে যুগপৎ আন্দোলন, আবার কখনো বিএনপির সাথে জোট করে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ- এ ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে দলটির আমির বলেন, ‘যখন দেশে কোন ধরনের ফ্যাসিজম এসেছে, যখন অন্যায় করেছে সরকার, তখন আমরা তার প্রতিবাদ করেছি। একই সুরে যারা প্রতিবাদ করেছে, সংগত কারণেই তাদের সাথে আমাদের ব্যাপারটি মিলে গেছে। আমরা চারদলীয় জোট করেছিলাম, যেটা পরে ২০ দলীয জোটে রূপান্তরিত হয়েছিল। তবে, এখন আমরা কোন জোটে নেই।’
‘জোটে আমরা গিয়েছি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে, আদর্শিক কোন ঐক্য ছিল না।’ যোগ করেন তিনি।
এ হিসেবে আদশর্গত না হলেও ফের কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিকভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা রয়ে যায় কি না, এ ব্যাপারে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে হবে কি না, এটা বলা কঠিন। কারণ, যে আওয়ামী লীগ তার নিজের দেশের মানুষকে, জনগণের কেনা অস্ত্র দিয়েই গুলি চালাতে পারে, গণহত্যা করতে পারে, তাদের নিজেদের রাজনীতি করাই তো চিন্তাভাবনার ব্যাপার।’