ঢাকা: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ অফিসে হেফাজতের নামে আটক রেখে জোর করে মিথ্যা বিবৃতি নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। এছাড়া, গেল কয়েক দিনে ডিবি কার্যালয়ে কী ঘটেছে, সেই ব্যাপারেও কথা বলেছেন তারা।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা এসব কথা জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে ছয় সমন্বয়ক বলেন, ‘মূলত আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছত্রভঙ্গ করতেই ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় ‘নিরাপত্তার’ নামে ছয় সমন্বয়ককে সাত দিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবির প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আমাদেরকে আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্যই ডিবি হেফাজতে রাখা হয়েছিল।’
তারা আরো বলনে, ‘আমরা গুম, গ্রেফতার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম; আমরা আমাদের মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু, অসাংবিধানিক ও আইনবহির্ভূতভাবে আমাদেরকে ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়। প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। আদালতের আদেশ ছাড়া নাকি আমাদের ছাড়া যাবে না।’
তারা বলেন, ‘যারা নিরস্ত্র ছাত্র-নাগরিককে গুলি করে খুন করে তাদের হেফাজতে কেউই নিরাপদে থাকতে পারে না। সরকারের কাছে আমরা এ প্রহসনের নিরাপত্তা চাই না ৷ আমরা আমাদের ভাই-বোনদের খুনের বিচার চাই।’
আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়ককের ভিডিও স্টেটমেন্টটি তারা স্বেচ্ছায় দেয়নি উল্লেখ করে তারা বিবৃতিতে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন সিদ্ধান্ত ডিবি অফিস থেকে আসতে পারে না। পুরো দেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।’
‘ডিবি অফিসে আমাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। আমাদের শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে, দেখা করতে দেওয়া হয়নি।’
তারা বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক, পুরো দেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গেল মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের ডিবি অফিসে আটক অবস্থায় অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। পরবর্তী সে খবর জানামাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন। অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও অধিক সময় অনশনের পরে ডিবির প্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়।’
তারা বলেন, ‘গেল সাত দিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সাথে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনো শিক্ষার্থীদের ওপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে ও পুরো দেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘ছাত্র-নাগরিক খুনের বিচার ও আটককৃত নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে ও পুরো দেশে ছাত্র-নাগরিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে সরকারের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও দমন-পীড়নকে তোয়াক্কা না করে রাজপথে নেমে আসুন। শহীদের রক্ত বৃথা যাবে না।’