ঢাকা: ওয়াটারএইড, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়া (এএসসিআই), বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং কিম্বারলি-ক্লার্কের যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) লেকশোর হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জ অন পাবলিক স্যানিটেশন’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠক। এতে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ ও অংশীজনরা পাবলিক স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা ও ভাবনা তুলে ধরেন; পাশাপাশি, মত বিনিময়কালে তারা কোন বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও পাকিস্তানে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহু দিন ধরেই বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এসব দেশে স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন সমস্যা নিয়ে সরকার, সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে; তবে, স্থান স্বল্পতা ও অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি দ্রুত নগরায়ন এ-সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ধারাবাহিকভাবে প্রতিকূলতা তৈরি করছে। ফলে, পাবলিক স্যানিটেশন নিয়ে সংকট ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসব বিষয়ে আলোকপাত করে ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয় ও অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্টাফ কলেজ অব ইন্ডিয়া বৈঠকের মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে গণ-শৌচাগার নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের এ খাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগ, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও কাঠমান্ডু মেট্রোপলিটান সিটি অফিসের প্রতিনিধিবৃন্দসহ অন্যান্য বক্তা নিজেদের মধ্যে মতামত, ধারণা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
আলোচনা ও প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. আকবর হোসেন, ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ডাক্তার মো. খায়রুল ইসলাম, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, প্রফেসর ভি শ্রীনিবাস চারি, এম স্নেহলতা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বৈঠক সঞ্চালনা করেন।
চলতি বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে সফরকালে প্রতিনিধিরা হায়দ্রাবাদ, ওয়ারাঙ্গল, দিল্লি, কলকাতা, কাঠমান্ডু, ললিতপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাবলিক স্যানিটেশন সুবিধা সংক্রান্ত জায়গা ও স্থাপনা ঘুরে দেখেন। ভবিষ্যতের জন্য করণীয় হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ায় অ্যাসপিরেশনাল পাবলিক টয়লেট ফিচার এবং এগুলোর পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা মডেল ইত্যাদিকে আরো ভালভাবে সংজ্ঞায়িত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি ও অনুসরণের প্রয়োজনীয়তাও আলোচিত হয়।
সর্বসাধারণের সমস্যা মোকাবেলায় পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব উল্লেখ করে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন থেকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব পেট্রোল ও গ্যাস স্টেশন এবং শপিংমলগুলিতে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পাবলিক টয়লেট থাকতে হবে, যেগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, সর্বসাধারনের ব্যবহারযোগ্য ও জেন্ডার-বান্ধব হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাবলিক টয়লেটগুলির আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে এখন থেকে আমরা এগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রদান সুবিধা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’
মেয়র আশ্বাস দেন যে, পাবলিক টয়লেট সংক্রান্ত সব উদ্যোগে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ তাদের পূর্ণ সহায়তা করবে।’
অনুষ্ঠানে মো, খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জের মত আঞ্চলিক শিক্ষা আন্তবিনিময় আয়োজন নিজেদের মধ্যে সেরা অনুশীলন, ধারণা ও উদ্ভাবনগুলি ভাগ করে নেয়ার জন্য দুর্দান্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে কার্যসংক্রান্ত রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীদের জন্য নির্বিঘ্নে পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এটি সহায়তা করে।’
ভি শ্রীনিবাস চ্যারি বলেন, ‘ভোট দানের মতই পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ লাভ করা প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার, যা গণতান্ত্রিকতা নিশ্চিতকরণেরও এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাবলিক টয়লেট ব্যবহার সুবিধা উন্নয়নের প্রশ্নে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলো অনেক এগিয়ে।’
হাসিন জাহান বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বেশ কিছু পাবলিক টয়লেট নকশা ও নির্মাণ করেছে, যা থেকে বর্তমানে উপকৃত হচ্ছেন লাখো মানুষ।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৬ অর্জন এবং সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য নির্ভরযোগ্য পাবলিক স্যানিটেশন নিশ্চিত করা অন্যতম পূর্বশর্ত।’
সাউথ এশিয়ান এক্সচেঞ্জ অন পাবলিক স্যানিটেশনে যুক্ত হতে পেরে এবং এ আয়োজনে নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে সিটি কর্পোরেশন এবং পৌরসভা মেয়রবৃন্দ এবং সরকারী কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ করতে পেরে আমরা গর্বিত বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।’
আয়োজনে প্রদর্শনীর মাধ্যমে পাবলিক স্যানিটেশনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক বিভিন্ন উদ্ভাবন উপস্থাপন করা হয়। প্রদর্শনীতে ওএন্ডএম মডেলস (বাংলাদেশ), সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ (বাংলাদেশ), সোশ্যাল অডিট (ভারত), ইনোভেশন প্রজেক্টস (ভারত) এবং বাস ট্যুর অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন (নেপাল) তুলে ধরে হয়। এ সময় প্রতিনিধি ও অংশীজনেরা পাবলিক টয়লেট, কার্যক্রম এবং রক্ষণাবেক্ষণ, পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্ব ও উদ্ভাবন এবং পর্যবেক্ষণের জন্য অন্তর্ভুক্তির বিষয়ভিত্তিক উপাদানসমূহ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।