শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

তৃণমূল সাধারণ মানুষের বন্ধু আহাম্মদ কবীর স্মরণে

সোমবার, জুন ৫, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

আবুল হাসেম খান: মানুষ সাধারণত: একটি পেশায় দক্ষতা অর্জন করে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নশ্বর এ পৃথিবীতে সীমিত সময়ের কর্মময় জীবনে সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে মানুষের মনে স্থান করে নেয়। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষকে আল্লাহ যে জ্ঞান-বিচারবুদ্ধি দিয়েছেন, মানুষ তার অংশবিশেষও ব্যবহার করে না। এ ক্ষেত্রে, আহাম্মদ কবীর ব্যতিক্রম। তার সাংগঠনিক দক্ষতা আর নেতৃত্বের গুণাবলীর মাধ্যমে সমাজের বিস্তৃত পরিধির সাথে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলনের একজন প্রভাবশালী যোগ্য নেতা ছিলেন। সমাজ গবেষণা, সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা, শ্রমিক আন্দোলন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে আমরন নিরলস কাজ করেছেন তিনি।

১৯৫৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারী আহাম্মদ কবীর চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় উপজেলায় জন্ম নেন। নিরহংকার সরল জীবন-যাপন ছিল তার। শ্রমিক কলোণীতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার বাসায় সকলের অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল। শ্রমিকের পক্ষে শো-কজ নোটিশের জবাব লিখে দেয়া, সাসপেন্ড, টার্মিনেট হলে শ্রম আদালতে যওয়ার পরামর্শ দিতেন। সাধারণ মানুষের নানা ধরনের সমস্যার জন্য সুপরামর্শ দিতেন। ধৈয ধরে সাধারণ মানুষের সমস্যাবলী সমাধান করার জন্য সারা জীবনভর চেষ্টা করে গেছেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের একান্ত আপনজন।
নাট্যচর্চায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার থেকে তিনি ‘নাট্যজন সম্মাননা’ পেয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে তিনি এ সম্মাননা নেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতি, মানবাধিকার বিষয় তুলে ধরে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে অনেক নাটক রচনা করেছেন।

২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সিটির মুসলিম হলে বিভিন্ন দেশের শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
সংগঠন পাগল এ মানুষটির সাথে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষের যোগাযোগ ছিল। চিঠি লিখে বা ফোনে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ত্যাগী, মহৎ প্রাণের এ ব্যক্তিত্ব আমাদের মনে ভাষ্কর হয়ে থাকবে। নতুন প্রজন্মের সামনে আমরা তাকে আদর্শ অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে তুলে ধরব।

তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তথ্যবহুল প্রতিবেদন লিখতেন। খুবই অল্প সময় ঘুমাতেন, জেগে থাকার প্রতিটি মুহুর্তকে কাজে লাগাতেন তিনি। তার জন্ম স্থান পটিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে গবেষণামূলক ইতিহাস বই তিনি প্রকাশ করেছেন। তার কর্মময় জীবন কেটেছে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের সাথে দেশের সাধরণ মানুষের উন্নয়ন কর্মকান্ডে। নিরবে, নিভৃতে সমাজ উন্নয়ন কাজ করেছেন এ কর্মবীর। তার বাস্তব জীবনের কাজের দিনলিপি প্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন। তার দেয়া দৈনন্দিন কাজের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শগুলো আমাদের অনেক কাজে লাগবে।

২০০১ সালে চট্টগ্রামস্থ কালুরঘাট শিল্প এলাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিয়ে ১ মে মহান মে দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক সভা করেন। সভা শেষে তার লেখা নাটক প্রদর্শিত হয়। একজন গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে তার সহযোগীতায় আমি সাংগঠনিক কাজ শুরু করি। তার নেতৃত্বে শ্রমিক নেতাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। তার পরামর্শে আমার নিজ জেলা নেত্রকোণায় গণ পাঠাগার, শিশু ক্লাব গড়ে তুলি। তার পরামর্শে গড়ে উঠা সংগঠনগুলো নেত্রকোণা জেলায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে।

আমার স্ত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার সময় নানাভাবে তিনি সহায়তা করেছেন। তার পরামর্শে আমি ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য ‘ক্যান্সার সারভাইভার্স ফোরাম’ গড়ে তুলি। সংগঠনটি এখন সারা দেশে ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করছে। ২০২২ সালের ৭ মার্চ সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ ‘বিজয় এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ক্যান্সার প্রতিরোধ সচেতনতায় ‘ট্রেন ক্যাম্পেইন’ এর একজন সক্রিয় আয়োজক ছিলেন তিনি।

২০২৩ এর ২৮ মার্চ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তার অকাল মৃত্যু আমাদের সমাজ উন্নয়ন কাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমার অনুকরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব আহাম্মদ কবীরের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

লেখক: প্রজেক্ট অফিসার, অগ্রযাত্রা।