ঢাকা: আগামী দুই দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে অবস্থানকালে তারা সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ করব, যাকে নিয়ে কোন বিতর্ক বা প্রশ্ন উঠবে না। যেমন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখেছি ফ্যাসিস্টদের দোসররা ইতোমধ্যেই দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি শুরু করে দিয়েছে। আমরা যদি তাদের ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যাই, তাহলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তারা সুযোগ পেলে ফের রাজপথে এসে ষড়যন্ত্র শুরু করতে পারে।’
সারজিস আলম বলেন, ‘একটি যুদ্ধে কৌশল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গতকাল ফ্যাসিস্টের দোসর রাষ্ট্রপতির যে কথাটি শুনেছিলাম, তাতে আমাদের রক্ত টগবগিয়ে মাথায় উঠে যায়। এ রক্তের ক্ষত এখনো ভাসছে। আমরা যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনই তার পদত্যাগ করিয়ে ফেলি তাহলে রাষ্ট্রের বড় ক্ষতি হতে পারে।’
বলে রাখা ভাল, ছাত্র-জনতার তোপের মুখে গেল ৫ আগস্ট পালিয়ে যান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ও আমি তা গ্রহণ করেছি।’
সম্প্রতি মানবজমিনের প্রকাশনা জনতার চোখের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে- নেপথ্যের গল্পতে প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী জানান, ‘রাষ্ট্রপতি তাকে জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু তার কাছে কোন দালিলিক প্রমাণ নেই।’
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নিয়ে সমালোচনার পর অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে সোমবার (২১ অক্টোবর) বঙ্গভবনের পাঠানো ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক বৈধতার উপর যত ধরনের প্রশ্ন জনমনে উদ্রেক হয়েছে, সেগুলোর যাবতীয় উত্তর স্পেশাল রেফারেন্স নম্বর-০১/২০২৪-এ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গেল ৮ আগস্টের আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎকার নেয়া মতিউর রহমান চৌধুরীও বলছেন, ‘প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অসত্য কথা বলেননি।’
গেল সোমবার (২১ অক্টোবর) ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আসল ঘটনাটা কী সেটা জানার চেষ্টা করেছি আমি, বহু দিন। তারপর প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি) সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রেসিডেন্ট সাহেব যা সত্য তাই বলেছেন। এখানে ষড়যন্ত্রেরও কিছু নেই আর প্রেসিডেন্ট অসত্য কথা বলেছেন বলেও তো আমার মনে হয় না। তিনি তো পরিষ্কার বলেছেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে। ওই রিপোর্টেও কিন্তু তিনি নিজেই বলেছেন, এটা মীমাংসা হয়ে গেছে। সেটাও ছাপা হয়েছে।’
পদত্যাগপত্রের ইস্যু অন্তর্বর্তী সরকারই মীমাংসা করতে পারে জানিয়ে মতিউর রহমান বলেন, ‘যারা সরকারে আছেন, তারাই তো এটার মীমাংসা করতে পারেন। তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে যদি দালিলিক প্রমাণ থাকে, তাহলে তারা সেটা সামনে আনতে পারেন। আমার ফাইন্ডিংস হচ্ছে দালিলিক কোন প্রমাণ নেই। রাষ্ট্রপতি এটা আমাকে বলেছেন, তার কাছে যায়নি (পদত্যাগপত্র)। কিন্তু, উনি তো এটা বলেননি যে পদত্যাগ অবৈধ, এটা ঠিক না। বঙ্গভবন থেকে যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। উনি যথার্থই বলেছেন।’