ঢাকা: আনুমানিক ৮০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৬১৫ কোটি টাকার টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও তার স্ত্রী আফরিন তাপসের বিরুদ্ধে পৃথক দুই মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (৫ জানুয়ারি) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা দুইটি দায়ের করেন। দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০, ঢাকা-১২ ও ডিএসসিসির সাবেক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৭৩ কোটি ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭ টাকা মূল্যের সম্পদের অসাধু উপায়ে অর্জন করেন। তাপস নিজ নামীয় ২৭টি ব্যাংক হিসাবে ২০১৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৩০৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৮ টাকা জমা ও ২৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা উত্তোলন করে তার ব্যাংক হিসাবে মোট ৫৩৯ কোটি ১৬ লাখ ২৫ লাখ ২৭৮ লেনদেন করেন। একইসঙ্গে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৭ মার্কিন ডলার অস্বাভাবিক লেনদেন করেন।
অপর মামলায় আসামি করা হয়েছে ফজলে নূর তাপসের স্ত্রী আফরিন তাপসকে। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘আসামি তার স্বামী তাপসের সহায়তায় আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬ কোটি ৪০ লাখ ৮৯ হাজার ৯৮ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অসাধু উপায়ে অর্জন করেন। তার নিজ নামীয় ৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭০ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৯ টাকা লেনদেন করেন। অন্যদিকে, দুই লাখ ২ হাজার ২৫৯ মার্কিন ডলার জমা ও ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৪ মার্কিন ডলার উত্তোলনসহ মোট ৩ লাখ ৯৫ হাজজর ৯৬৩ মার্কিন ডলার অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন।’
দুদক বলছে, ‘অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ গোপন ও আড়াল করার উদ্দেশ্যে জ্ঞাতসারে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪’-এর ২৭ (১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২’-এর ৪ (২) ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা।’
অভিযোগ অনুসন্ধানে গত ৩ নভেম্বর হাজির হয়ে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাপসকে তলব করেছিল দুদক। অভিযোগ ছিল টেন্ডার, ইজারা, নিয়োগ, দোকান বরাদ্দসহ অসংখ্য কাজ করেন তিনি আত্মীয়-স্বজন ও তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ, পুরো সংস্থায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতির রাজত্ব করেন তাপস। গত চার বছরে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত করেন তিনি। তাদের চাকরিচ্যুত করেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করছেন। ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিজেকে রীতিমত ‘রাজা’ ভাবতে থাকেন তাপস। গত চার বছরে ভারী গাড়ির ১৪৩ জন চালক, ৬৬ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, ৭৭ জন হিসাব সহকারী, ২৭ জন রেভিনিউ সুপারভাইজার, ৩১ জন পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক, ২০ জন স্প্রে-ম্যান সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন বিভাগে সর্বমোট ৮৭৯ জন জনবল নিয়োগ দেন। যার মাধ্যমে কয়েক শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এর আগে গত ৮ অক্টোবর তাপস, তার স্ত্রী শিউলি, ছেলে শেখ ফজলে নাশওয়ান ও তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।