ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র: দ্বিতীয় প্রশাসনের ব্যাপারে ব্যাপক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রায়ই বিশদ বিবরণ এড়িয়ে যান, তবে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নীতি ঘোষণা ও লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে তিনি একটি বিস্তৃত এজেন্ডা তুলে ধরেছেন। এটি কর ও বিধিনিষেধসহ সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রচলিত রক্ষণশীল পন্থার সাথে বাণিজ্যে আরও জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভূমিকার পরিবর্তনের সাথে একীভূত করেছে। সংবাদ এপির।
ট্রাম্পের এজেন্ডা নাগরিক অধিকারের ব্যাপারে ফেডারেল সরকারের প্রচেষ্টা কমাবে ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রসারিত করবে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কী কী প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প:
ইমিগ্রেশন: ২০১৬ সালের প্রচারের ‘বিল্ড দ্য ওয়াল’ স্লোগানটি এখন ‘ইতিহাসে বৃহত্তম গণ-নির্বাসন কর্মসূচি’ তৈরির পরিকল্পনায় পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প এই প্রয়াসে ন্যাশনাল গার্ড ও স্থানীয় পুলিশ বাহিনীকে ক্ষমতায়িত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, এই কর্মসূচি কীভাবে পরিচালিত হবে, সে ব্যাপারে তিনি কিছুই উল্লেখ করেননি। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে শুধু অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের তিনি কীভাবে টার্গেট করবেন, সেই ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি। সম্ভাব্য প্রবেশকারীদের জন্য ‘ইডিয়োলজিক্যাল স্ক্রিনিং’ প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করার কথা বলেছেন (যার জন্য প্রায় নিশ্চিতভাবেই সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে)। প্রথম প্রশাসনিক মেয়াদের মত ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়াও, জনস্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে অভিবাসীদের সীমিত করা এবং নির্দিষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশগুলির নাগরিকদের প্রবেশ কঠোরভাবে সীমিত বা নিষিদ্ধ করার কথাও বলেছেন। সব মিলিয়ে এই পদ্ধতি শুধু অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করবে না, বরং সামগ্রিকভাবে অভিবাসন কমাবে।
গর্ভপাত: ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে গর্ভপাতকে অগ্রাধিকার না দেওয়ার কথা বলেছেন, যদিও তিনি গর্ভপাতের ক্ষেত্রে নারীদের ফেডারেল অধিকার বাতিল করে এটি রাজ্য সরকারের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ট্রাম্পের অনুরোধে, কয়েক দশকের মধ্যে প্রথম বারের মত রিপাবলিকান পার্টির প্ল্যাটফর্মে জাতীয় পর্যায়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়নি। ট্রাম্পের মতে, ফেডারেল স্তরে রো ভি ওয়েড বাতিল করাই যথেষ্ট। গেল মাসে নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি জানান, গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার ফেডারেল আইন তার টেবিলে পৌঁছালে তিনি ভেটো দেবেন।
কর: ট্রাম্পের কর নীতি সাধারণভাবে করপোরেশন ও ধনী মার্কিনীদের পক্ষে। এর প্রধান কারণ, ২০১৭ সালের তার কর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বজায় রাখা, যার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন রয়েছে। যেমন করপোরেট আয়ের কর হার ২১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা। এর মধ্যে রয়েছে ধনী মার্কিনীদের উপর ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আয়কর বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জ্বালানি ব্যবস্থার অর্থায়নে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইনের শুল্ক বাতিল করা। এই নীতিগুলো সত্ত্বেও, ট্রাম্প শ্রমজীবী ও মধ্যবিত্ত মার্কিনীদের জন্য নয়া প্রস্তাবগুলোতে আরও জোর দিয়েছেন। অর্জিত টিপস, সামাজিক সুরক্ষা মজুরি এবং ওভারটাইম মজুরিকে আয়কর থেকে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন।
শুল্ক ও বাণিজ্য: আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান হল বিশ্ববাজারকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর মনে না করা। তিনি বিদেশি পণ্যের উপর দশ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক প্রস্তাব করেছেন- এবং কিছু বক্তৃতায় আরও বেশি শতাংশের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চীনাদের ‘যে কোন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো’ কেনা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ডিইআই, এলজিবিটিকিউ ও নাগরিক অধিকার: ট্রাম্প সমাজে বৈচিত্র্য এবং এলজিবিটিকিউ নাগরিকদের জন্য আইনগত সুরক্ষার প্রতি গুরুত্ব কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তির (ডিইআই) প্রোগ্রামগুলো বন্ধ করার কথা বলেছেন এবং এক্ষেত্রে ফেডারেল তহবিলকে একটি টুল হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছেন।