ফিলাডেলফিয়া, যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দলের প্রার্থীদের বিতর্কে বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যম কমলা হ্যারিসকে জয়ী ঘোষণা করেছে। ট্রাম্প-সমর্থক ফক্স নিউজও কমলাকে জয়ী বলছে। ভাল করায় ট্রাম্পের বিপক্ষে দ্বিতীয় বিতর্ক চায় কমলা প্রচারশিবির।
হাস্যোজ্জ্বল কমলা হ্যারিস বিতর্কের মঞ্চে উঠেই এগিয়ে গিয়ে অপর প্রান্তের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে করমর্দন ও কুশল বিনিময় করার দৃশ্যই হয়তো আমেরিকানদের মন জয় করে।
দুইজনেই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে একে অপরকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম এবিসি নিউজের আয়োজিত এ বিতর্কের সঞ্চালক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস অনেকটা ভালভাবেই সামলেছেন। ৫৯ বছর বয়সি কমলা আর ৭৮’-এর ট্রাম্পের বাকযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম কামালা হ্যারিসকেই জয়ী বলছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম ফক্স নিউজকে বলা হয় ট্রাম্পে সমর্থক। সেই ফক্স নিউজই কমলাকে জয়ী বলেছে। ফক্স নিউজের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিট হিউম বলেন, ‘কমলা খুব ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন ও বিতর্কজুড়ে বিভিন্ন ব্যাপারে ট্রাম্পকে লক্ষ্যচ্যুত করতে সক্ষম হয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য এটি খারাপ রাত ছিল।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হ্যারল্ড ফোর্ড জুনিয়র সরাসরি বলেন, ‘এ বিতর্কে জয় পেয়েছেন কমলা।’
ভোটারদের মতামতের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ‘মঙ্গলবার রাতের বিতর্কে এগিয়ে রয়েছেন কমলা।’ ৯০ মিনিটের ওই বিতর্ক দেখেছেন এমন ছয়জন ভোটারের সাথে কথা বলে বিবিসি জানিয়েছে, বিতর্কে কামালায় মুগ্ধ ভোটাররা। তবে, কাকে ভোট দেবেন তা এখনো চূড়ান্ত করেনি অনেকে।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ‘কমলা অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বিতর্ক জুড়ে নিজের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ রেখেছে।’ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালও বলছে একই কথা। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কমলা সফলভাবে ট্রাম্পকে তার আইনি সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দমিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।’
ইউএসএ টুডে হ্যারিসের পারফরম্যান্সকে শক্তিশালী বলে বর্ণনা করেছে। অন্য দিকে, ট্রাম্প ছিল রক্ষণাত্মক। টেলিভিশন চ্যানেল এমএসএনবিসি বলছে, ‘এ বিতর্কে কমলার জয় খুব স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে। কথার লড়াইয়ে হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুব সহজেই হারিয়েছে।’ একই ধরনের মন্তব্য সিএনএনেরও। তাদের মন্তব্যে উঠে আসে বিতর্কে খুব সংক্ষেপেই নিজের অবস্থা তুলে ধরে কমলা বিতর্কে ভাল করেছে।
প্রথম বিতর্কে জো বাইডেনকে ঘায়েল করলেও এবার কমলাকে মোকাবিলায় অনেকটা ব্যর্থ ট্রাম্প বলেছেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হলে দ্বায়িত্ব নেয়ায় পূর্বেই রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ ঠেকাবেন।’ অপর দিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ও মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেয়ার কথা জানান ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস। হতে চান সব জনগণের প্রেসিডেন্ট।
বিতর্কে ভাল করায় কমলাকে অভিনন্দন জানিয়েছে তার প্রচারশিবির। নির্বাচনের পূর্বে আরো একটি বিতর্কে অংশ নেয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডেমোক্রেটিক দল।
কমলার প্রচারশিবিরের মুখপাত্র জেন ও’ম্যালি ডিলন বিবৃতিতে আগামী মাসে ওই বিতর্ক আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন। ডিলন লেখেন, কমলা হ্যারিস দ্বিতীয় বিতর্কের জন্য প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি রাজি?
ডিলন আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ব্যালট বাক্সে উত্তর দেবেন, তারা কমলা হ্যারিসের সাথে এগিয়ে যেতে চান, নাকি ট্রাম্পের সাথে পিছিয়ে যেতে চান। ভোটাররা মঙ্গলবার রাতে এটাই দেখেছেন ও অক্টোবরে দ্বিতীয় বিতর্কেও তা দেখতে চান।’
আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। এর পূর্বে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে আর কোন বিতর্কের ঘোষণা এখন পর্যন্ত নেই। তবে, আগামী ১ অক্টোবর কমলার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম ওয়ালজ ও ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্সের মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সিবিএস নিউজ ওই বিতর্ক আয়োজন করছে।