নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: ‘ফিলিস্তিনিদের সাথে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ধারণাকে ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান ‘অগ্রহণযোগ্য’ ও এতে গাজায় যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে পারে।’ মঙ্গলবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ কথা বলেছেন।
গুতেরেস দাবি করেছেন, ‘ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান হওয়া উচিত।’
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বক্তৃতায় গুতেরেস বলেছেন, ‘গেল সপ্তাহে ইসরায়েলের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের স্পষ্ট ও বার বার প্রত্যাখ্যান অগ্রহণযোগ্য।’
গুতেরেস বৈঠকে বলেন, ‘এই প্রত্যাখ্যান ও ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্টার দাবি অস্বীকার করা- একটি সংঘাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দীর্ঘায়িত করবে; যা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই ধরনের ফলাফল ‘মেরুকরণকে আরো বাড়িয়ে তুলবে ও সর্বত্র চরমপন্থীদের উৎসাহিত করবে।’
গুতেরেস ‘ফিলিস্তিনি জনগণের নিজস্ব সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার অধিকার’এর সর্বজনীন স্বীকৃতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পৃথিবীজুড়ে নিন্দার মুখে পড়েছেন ও ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্র এই সহায়তা বন্ধে চাপের মধ্যে পড়েছে।
ইসরায়েল গাজায় হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার করে স্থল অভিযানের পাশাপাশি বিমানে হাজার হাজার পাউন্ড বোমা ফেলে গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। এতে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজারে পৌঁছেছে। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ মহিলা ও শিশু। এতে ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী নিন্দার মুখোমখি হয়েছে ও যুক্তরাষ্ট্রকেও এর দায়ভার বহন করতে হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান করার কয়েক দিন পর নেতানিয়াহুর কার্যালয় গেল সপ্তাহে বলেছে, ‘হামাস ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও’ ইসরায়েলকে ‘গাজার ওপর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে।’
তিনি ঘোষণা করেন, ‘জর্ডান নদীর পশ্চিমের সব অঞ্চলের ওপর ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন।’
ইসরায়েলের মিত্ররা তার এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছে। যদিও খুব কম লোকই সমর্থন ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের সভাপতিত্বে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্টেফান সেজার্ন বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র থাকতে হবে।’
এমনকি নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সরাসরি বলেছেন, ‘তিনি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তা সত্ত্বেও এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।’
মানবাধিকার বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) বলেছেন, ‘এটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দৃঢ় প্রত্যয় যে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দুইটি রাষ্ট্রই টেকসই শান্তির একমাত্র পথ।’
যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনের প্রতি অবহেলা’ আর সহ্য করা উচিত নয়।’
অন্য দিকে, রাশিয়ার শীর্ষ কূটনীতিক সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ‘রক্তপাত বন্ধ করার জন্য প্রস্তুত সব প্রচেষ্টা ও উদ্যোগকে অবরুদ্ধ করেছে।’
ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, ‘গাজাকে সাহায্য দেয়া ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হলেও ইরান ‘মধ্যপ্রাচ্য ও পৃথিবীর জন্য ভয়াবহ হুমকির মূল।’
গাজার পুরো জনসংখ্যা একটি ভয়াবহ ধ্বংস ও বিপর্যয় সহ্য করছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন নজির নেই- এ কথা উল্লেখ করে আন্তোনিও গুতেরেস নয়া মানবিক ক্রসিং পয়েন্ট স্থাপন ও ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে সহায়তা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, সাড়ে তিন মাস অবিরাম বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণের পর ক্ষুদ্র ভূমি গাজা উপত্যাকার দুই ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা দুর্ভিক্ষ ও রোগের হুমকিসহ একটি তীব্র মানবিক সংকটের মুখোমুখি।