শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নজরুল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার করল প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগ

সোমবার, জানুয়ারী ৯, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

চট্টগ্রাম: প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির দামপাড়াস্থ কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে ইংরেজি বিভাগের উদ্যোগে ‘পয়েট নজরুল ইন এ গ্লোকাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিকালে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর অনুপম সেন। উদ্বোধন করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর মোহীত উল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নজরুল স্কলার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর উইন্সটন লেংলি এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর র‌্যাচেল ম্যাকডরমট। সভাপতিত্ব করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান। উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর কাজী শামীম সুলতানা।

সেমিনারে অনুপম সেন বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকে এ দেশে বিদেশিরা এসেছে। এ দেশে আর্য এসেছে, পাঠান এসেছে, মোঘল এসেছে, হুন এসেছে। তারা এখানে এসে একসাথে লীন হয়েছে। এ দেশে ব্রিটিশরাও এসেছিল। তবে এখানে আসা অন্যদের সাথে তারা লীন হয় নি। এ দেশের বাসিন্দা হয় নি। তারা ১৭৫৭ সালে এ দেশ দখল করে নেয় ও তিন বছরের মধ্যে এ দেশ থেকে তৎকালীন ৫০০ কোটি পাউন্ডের সম্পদ লুণ্ঠন করে ও সেই সম্পদ দিয়ে ১৭৬০ দশকে ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত করে। তাদের ঔপনিবেশিক শাসন ও লুণ্ঠন ১৯০ বছর চলেছিল। নজরুলের বিদ্রোহ ছিল এ ঔপনিবেশিক শাসন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে এ দেশে জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে উঠে। নজরুল তার বিভিন্ন কবিতা ও গানে এ আন্দোলনকে তুলে ধরেছিলেন। নজরুল তার বিদ্রোহকে তার কবিতা ও গানে মহাবিদ্রোহে রূপ দিয়েছিলেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘নজরুল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতার কবি। তার সাথে কেবলমাত্র তুলনা চলে হাইনের, কিছুটা বায়রনের। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, আমরা যুদ্ধে ও জেলে যাওয়ার সময় নজরুলের কবিতা পড়ব, গান গাইব।’

অনুপম সেন উল্লেখ করেন, নজরুল ইসলাম এ বিশ্বে সাম্যেরও একজন মহাসাধক।

মোহীত উল আলম ‘গ্লোকাল’ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘নজরুলের চিন্তা ও দর্শনে দেশীয় ও বৈশ্বিক সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছে।’

তিনি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তার ঐক্য তুলে ধরেন। তিনি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও তার বৈপ্লবিক চেতনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ দেন।

উইন্সটন লেংলি তার ‘দ্য আইডিয়া অব পার্মানেন্ট রেভুল্যুশন’ শীর্ষক প্রবন্ধে আমেরিকার স্থপতি টমাস জেফারসন, দার্শনিক কার্ল মার্ক্স, মাও সেতুং ও গান্ধীর বৈপ্লবিক চিন্তার সাথে নজরুলের বৈপ্লবিক চিন্তার স্বরূপ তুলে ধরেন। তিনি নজরুলের বৈপ্লবিক ভাবনাকে মানবতার স্থায়ী সম্পদ বলে অভিহিত করেন।

তিনি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা বিষয়ে বলেন, ‘বিদ্রোহ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক হতে পারে। এ বিদ্রোহ একটি ভূখণ্ডের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

র‌্যাচেল ম্যাকডরমট তার ‘দ্যা ফেস অব মিসফরচুন: এক্সপ্লোরিং দ্য ট্র্যাডিশন অব এ ডিসিসড হিরো’ শীর্ষক প্রবন্ধে নজরুলের যৌবন ও বার্ধক্যের অসংখ্য অলোকচিত্র তুলে ধরে তার জীবন ও কর্মের ব্যাখ্যা দেন। নজরুলের কর্ম ও দর্শনের মধ্যেই অবচেতনভাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষা বপন হয় বলে তার প্রবন্ধে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সহকারী অধ্যাপক শান্তনু দাশের সঞ্চালনায় সেমিনারে সাদাত জামান খান নজরুলকে অসাম্প্রদায়িক কবি হিসেবে তুলে ধরেন ও তার বিভিন্ন রচনা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।