নিয়ামে, নাইজার: নাইজারের সেনাবাহিনী রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত করেছে। দেশের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে আটক, সংবিধান বাতিল ও দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে সবকিছুই অনিদিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের একটি সূত্র জানায়, অভিজাত প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের অসন্তুষ্ট সদস্যরা রাজধানী নিয়ামে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমের বাস ভবন ও অফিসগুলোতে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ার পরে তাকে ‘মুক্ত করতে অস্বীকার’ করে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নেতারা বাজুমের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন। নাইজারের স্বাধীনতার পর প্রথম শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দুই বছর আগে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন।
ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটসের অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইকোওয়াস) প্রধান প্রতিবেশী বেনিনের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার জন্য নিয়ামি যাচ্ছেন।
বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে একটি টেলিভিশন ভাষণে, কর্নেল-মেজর আমাদু আবদারমানে বলেছেন, ‘আমরা, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনী প্রেসিডেন্ট বাজুমের শাসনের অবসান করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এটি নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি, দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক শাসনের প্রেক্ষিতে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এ সময় তার পাশে আরো নয়জন ইউনিফর্মধারী সেনা দেখা যায়।
তারা বলেছে, যে দেশের ‘সব প্রতিষ্ঠানের’ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে, সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ও ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ রাত দশটা থেকে সকাল পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। সংবিধান বাতিল ঘোষণা করেছে বিক্ষুদ্ধ সেনারা।
আবদারমানে ‘মানবাধিকারের নীতি অনুসারে ক্ষমতাচ্যুত কর্তৃপক্ষের শারীরিক ও নৈতিক সততার প্রতি সম্মানের বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে’ আশ্বস্ত করেছেন।
সাহেলের পশ্চিমাপন্থী নেতাদের একটি ক্ষুয়িষ্ণু গোষ্ঠীর সদস্য বাজুম ২০২১ সালের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি দারিদ্র্য, দীর্ঘ স্থায়ী অস্থিতিশীলতা ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিহাদি বিদ্রোহ জর্জরিত একটি দেশের নেতৃত্ব নিয়েছিলেন।
টুইটারে এক বার্তায়, এক্স সংকেত হিসাবে পুনঃব্র্যান্ড করা করে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় বলেছে, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের (পিজি) সদস্যদের মেজাজ ছিল ক্ষিপ্ত ও জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং জাতীয় রক্ষীদের সমর্থন পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল।’
প্রেসিডেন্টের অফিস বলেছে, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা যদি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে, তাহলে সেনাবাহিনী ও জাতীয় রক্ষীরা পিজির ওপর আক্রমণে প্রস্তুত রয়েছে।’
এতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবার ভাল আছেন।’
প্রেসিডেন্টকে আটকের কয়েক ঘন্টা পরে, বাজুমের সমর্থকরা অফিসিয়াল কমপ্লেক্সের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, পিজির সদস্যরা সতর্কীকরণ গুলি চালিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী এএফপির এক রিপোর্টার এ কথা জানান।
এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয় যে, তিনি বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন নাকি পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।
নিয়ামে নাইজারের ক্ষমতাসীন জোটের দলগুলো একটি বিবৃতিতে এটিকে আত্মঘাতী ও প্রজাতন্ত্র বিরোধী উন্মাদনা’ বলে নিন্দা করে বলেছে, ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট ও তার পরিবারকে, সেইসাথে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন ও অন্তরীণ করে রেখেছে।’
দেশের সীমানার বাইরে থেকেও নিন্দার ঝড় উঠেছে।
ইকোওয়াস ও আফ্রিকান ইউনিয়ন উভয়েই এটিকে ‘অভ্যুত্থানের চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে।
ইকোওয়াস অবিলম্বে বাজমের নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেছে, জড়িত সকলকে তার নিরাপত্তার জন্য দায়ী করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইকোওয়াসের বিবৃতি সমর্থন করে বলেছে, ‘এটি নাইজারের ‘গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার ও দেশটির স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্বক হুমকি।’
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন উভয়েই বলেছেন, তারা তাদের সমর্থন দেয়ার জন্য বাজুমের সাথে কথা বলেছেন।
নাইজারের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ও প্রতিবেশী আলজেরিয়াও নিন্দা জানিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, ‘নাইজারে ‘জোর করে ক্ষমতা দখলের যে কোন প্রচেষ্টা বা ‘অস্থিতিশীল’ করার তীব্র নিন্দা জানায়।’
বুধবার (২৬ জুলাই) নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ টিনুবুর সাথে আবুজায় বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্যালন বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) নিয়ামে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
টিনুবু বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্যালন নাইজারের প্রেসিডেন্ট গার্ড ও বাজুম উভয়ের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য মধ্যস্থতা করবেন।’