নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: সিডিপ্যাপ বন্ধের উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় করণীয় ঠিক করতে আলবেনি সিনেটরস প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির হোম কেয়ারের প্রবক্তা আবু জাফর মাহমুদ।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি )আলবেনিতে গভর্নর নেলসন এ রকফেলার এম্পায়ার স্টেট প্লাজায় নিউইয়র্ক রাজ্যের সিনেটর ন্যাথালিয়া ফার্নান্দেজের চিফ স্টাফ জেমস টোনিসহ একাধিক অ্যাসেম্বলি ম্যান, অ্যাসেম্বলি উইম্যানের সাথে বৈঠক করেন তিনি। এ সময় তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের শীর্ষ কর্মকর্তা, কর্মীসহ সেবাগ্রহীতারা উপস্থিত ছিলেন।
কেবলমাত্র একটি অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিষ্ঠান পিপিএলের ওপর পুরো স্টেটের হোমকেয়ার সেবার দেখভালের দায়িত্ব দেয়াকে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন আবু জাফর।
বৈঠকে তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে স্টেটের মেডিকেড-চালিত হোম হেলথ কেয়ার প্রোগ্রামটিতে স্প্যানিশ, আফ্রিকান, বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন কমিউনিটির বয়স্ক, যে কোনো বয়সী প্রতিবন্ধীদের জন্য বছরের পর বছর ধরে সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামটি চালু আছে। নিউইয়র্কে এ সিডিপ্যাপ সেবার জন্য সেবাগ্রহীতারা একমাত্র নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর। কিন্তু এসব সেবাগ্রহীতাদের সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা না করে হুট করে এ খাতের সংশ্লিষ্ট উদ্যােক্তাদের না জানিয়ে গত বছর গভর্নর ক্যাথি হোকুলের বিশেষ ইশারায় স্টেট সেনেট ও অ্যাসেম্বলি বাজেট প্রোগ্রামের মডেল পরিবর্তন করে ৭০০’র কাছাকাছি সিডিপ্যাপ প্রতিষ্ঠানকে অযৌক্তিকভাবে বাতিল করে পিপিএলকে একক দায়িত্ব দেয়।’
আব জাফর আরও বলেন, ‘পিপিএল এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার সক্ষমতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। যে প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু স্টেটে হোমকেয়ার সেবায় দখলদারিত্ব বাড়াতে দায়িত্ব নিয়েও শেষমেষ পিপিএলের ম্যানেজমেন্টের অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। একই সাথে পিপিএলরের আর্থিক লেনদেনের কেলেঙ্কারির তথ্যও ওঠে আসেছে। অস্বাভাবিকভাবে সেবা বাতিল করা হয়েছে। যত্রতত্র বৈষম্যের প্রমাণ মিলেছে। এসব অভিযোগ এখনও ঝুলছে। পিপিএলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা দাবি করেছে যে, এটি কেয়ার গিভারদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং হঠাৎ করে গ্রাহকদের বাতিল করেছে।’
তিন আরো বলেন, ‘নিউইয়র্কে হোমকেয়ার সেবায় পিপিএলকে যখন যুক্ত করার চিন্তা করেছে স্টেট হেলথ ডিপার্টমেন্ট। গভর্নর তখন বিন্দুমাত্র এ খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করার প্রযোজন মনে করেননি। যেটি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। এ খাতে জড়িত গ্রাহক এবং পিএ- এদের ভাষা একই রকম হতে হবে। একই জনগোষ্ঠী, একই সংস্কৃতি এমনকি একই পরিবারের হতে হবে। এটিই নিউইয়র্কের হোম কেয়ার সেবার সৌন্দর্য। এটি সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামেরও সৌন্দর্য। কিন্তু গভর্নর এগুলো বির্বতনের চেষ্টা করছেন। তিনি এগুলো উপেক্ষা করে যাচ্ছেন ক্রমাগত। এই দুর্নীতি পরায়ণ ও অনুপযুক্ত রাক্ষস পিপিএলকে নিউইয়র্কের দায়িত্ব দেয়া হলে নিউইয়র্কের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে ভারসাম্য, বন্ধন তা ভেঙ্গে পড়বে। একই সাথে চাকুরী হারা হবেন অসংখ্যক হোম কেয়ার কর্মী। ব্যবসায় হারিয়ে পথে বসবেন এ খাতে ৭ শতাধিক হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান।’
এ সময় আবু জাফর স্টেট গভর্নর ক্যাথি হোকুলের সমালোচনা করে বলেন, ‘জনগণের ভোটে একজন নিবার্চিত প্রতিনিধির এমন ধ্বংসাত্বক সিদ্ধান্ত নিউইয়র্কের বৃদ্ধ, বয়স্ক ও ভারসাম্যহীন মানুষগুলোর জীবন-জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সামিল। গভর্নর এগুলো বিন্দুমাত্র কেয়ার করেনি। এমনকি, নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়েও সিটিজেনদের ভোটের কেয়ার করেনি। এ খাতে কর্মসংস্থান, লাখো মানুষের কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়েও তিনি উদাসীন। তবে এখন সময় এসেছে পুনরায় নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পিপিএল বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে।’
তিনি বলেন, ‘এখনই এ খাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে আগামী ১ এপ্রিল পিপিএলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।’
অচিরেই হোম কেয়ার সেবা আগের মতো চলার সিদ্ধান্ত না হয়ে প্রয়োজনে ফেডারেল সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবারও কথা জানান তিনি। আগামী মাসে সিডিপ্যাপ সেবা কার্যক্রম বন্ধ হলে কেবলমাত্র তার প্রতিষ্ঠানের ৯টি অফিস যেখানে কাজ করছেন অসংখ্য মানুষ তারা পথে বসবেন। এমন অবস্থা হবে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। তারা ব্যবসায় হারিয়ে কোথায় যাবেন?
তিনি বলেন, ‘গভর্নর ক্যাথি হোকুল ৭০০ বেশি প্রতিষ্ঠানকে মেরে ফেলতে চাইছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।’
এ সময় তিনি কংগ্রসের উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার এবং স্পিকার, সিনেটর, অ্যাসেম্বলি ম্যান, ওম্যানের কাছে নিউইয়র্কের সব হোমকেয়ার সেবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আবেদন জানান, যেন এই দুর্নীতিপরায়ণ এবং অনুপযুক্ত পিপিএলকে নিউইয়র্কের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার জন্য নিউইয়র্কের গভর্নরকে যাতে তারা অনুরোধ জানায়।
বৈঠকে অ্যাসেম্বলি মেম্বার স্টিভ স্ট্রেইনের প্রতিনিধি জানান, এরই মধ্যে পিপিএল নিয়ে বিভিন্ন স্টেটে হোম কেয়ার সেবা গ্রহীতা, সেবা দাতাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বিক্ষিপ্তভাবে আসছেন, অভিযোগ -অনুযোগ এমনকি নিউইয়র্ক স্টেট কর্মকর্তাদের পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মতামত তুলে ধরছেন।
তিনি বলেন, ‘স্টেটের নির্বাচিত ভেন্ডর, পাবলিক পার্টনারশিপ পিপিএল, অন্যান্য রাজ্যে তাদের অনুরূপ প্রোগ্রামগুলির বাস্তবায়নে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে পেনসিলভেনিয়া, কলোরাডো ও নিউ জার্সি রয়েছে। পিপিএলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা দাবি করেছে যে এটি কেয়ার গিভারদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং হঠাৎ করে গ্রাহকদের বাতিল করেছে।’
এ সময় নিউইয়র্ক সেনেট হেলথ কমিটির চেয়ার গুস্তাভো রিভেরাকে নিউইয়র্ক সিটির হোমকেয়ার সংক্রান্ত বিল নিয়ে ধন্যবাদ জানান আবু জাফর।
সিনেটর গুস্তাভো রিভারের পক্ষ থেকে হেলথ ডাইরেক্টর স্টন ডোনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক স্টেটে সিডিপ্যাপের সক্রিয় অবদান নিয়ে যথেষ্ট সচেতন তারা। পিপিএলের অংশীদারিত্ব বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে কাজ করে যাচ্ছেন সিনেটররা।’
এ সময় তিনি বাংলা সিডিপ্যাপ, অ্যালেগ্রা হোমকেয়ারকে ধন্যবাদ জানান।