নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীদের উচ্চ শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা পূরণের কাজে যুক্তরাষ্ট্রে ‘দ্যা অপ্টিমিস্টস’-এর দুই যুগ পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে গেল ১৩ অক্টোবর দুপুরে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জয়া হলে অ্যানুয়াল ফান্ড রেইজিং অ্যান্ড গেট টুগেদার ২০২৪ করেছে সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্পন্সরকারীসহ কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা মানবতার কল্যাণে নিরন্তরভাবে কর্মরত ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’র পাশে থাকার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এ অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে সমাজকর্মী সৈয়দ জাকি হোসেন বলেন, ‘বিপুল অর্থ-বিত্তের অধিকারী হলেই মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়া যায় না, এ জন্য দরকার উদারচিত্ত, ধৈর্য-ধারণ ও মানবিকতায় আত্মনিয়োগের অভিজ্ঞতা। টাকা থাকলেই চেক ইস্যু করা যায়। কিন্তু, সেই টাকা কীভাবে কী খাতে খরচ হবে, তা নির্ণয়ে মুন্সিয়ানার প্রয়োজন। বিশেষ করে মানবতার কল্যাণে যারা আগ্রহী, তাদের জন্য বিচক্ষণতার সাথে পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি মাদার তেরেসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন সাধারণ মানুষ হয়েও পুরো পৃথিবীতে তিনি মানবতার কাজে খ্যাতির শীর্ষে উঠেছিলেন।
সংস্থাটির কাজের প্রশংসা করে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান যোহরান মামদানি বলেন, ‘মানবতার কল্যাণে নিবেদিত ‘দ্যা অপ্টিমিস্টস’র সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।’
এ সময় তিনি গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতার প্রসঙ্গ টেনে প্রতিটি বিবেকবান মানুষকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানান। স্টেট অ্যাসেম্বলির পক্ষ থেকে এ সংস্থার সদস্য তারেক আলমকে বিশেষ সম্মাননা-স্মারক প্রদান যোহরান মামদানি।
‘দ্যা অপ্টিমিস্টস’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফাতেমা উদ্দিন রুমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চেয়ারম্যান মিনহাজ আহমেদ সাম্মু। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম ও প্রধান উপদেষ্টা রফিকউদ্দিন চৌধুরী রানা, অতিরিক্ত প্রধান উপদেষ্টা শামীম আহমেদ, প্রিন্সিপাল কো-অর্ডিনেটর মাহদী-উজ-জামান, মেম্বার সেক্রেটারি মাহবুবে খোদা, কোষাধ্যক্ষ আমিন মেহেদী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী, পরিচালনা পর্ষদের প্রেসিডেন্ট শাহেদুল ইসলাম অতিথি ও স্পন্সরদেকে স্বাগত জানান।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীদের উদ্যোগে গেল তিন দশকে মানবিক কল্যাণমূলক এমন বহু সংস্থার আবির্ভাব ঘটলেও পরবর্তী সেগুলোর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’ হচ্ছে একেবারেই ব্যতিক্রম। পুরো বছরের কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনসহ স্পন্সরকারীদের শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় করিয়েও দেয়া হয় ভার্চুয়ালে অথবা বাংলাদেশ ভ্রমণের সময় সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ-খবর নিতেও সহায়তা দেয়া হয়। আর্থিক আয়-ব্যয়ের এ ধারা অব্যাহত থাকায় ক্রমান্বয়ে স্পন্সরকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
নিউইয়র্কভিত্তিক এ অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি বাংলাদেশের বাগেরহাট, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঢাকা, দিনাজপুর, ফেনী, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, মাগুরা, মৌলভীবাজার, মুন্সিগঞ্জ, নরাইল, নারায়ণগঞ্জ, নোয়াখালী, রংপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট জেলা ও সাভার উপজেলায় কাজ করছে।
২৫৬ ব্যক্তিসহ ৩০টি কর্পোরেশন থেকে পাওয়া অর্থে ঝরে পড়ার আশঙ্কায় থাকা মেধাবি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে অবদান রাখছে এ সংস্থাটি। দৈনিক ৪০ সেন্ট অর্থাৎ মাসে ১১ দশমিক ২৫ ডলার তথা বার্ষিক ১৩৫ ডলার করে দিতে হচ্ছে হাই স্কুল পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য। আর কলেজ-ভার্সিটির (মেডিকেল, প্রকৌশল, কারিগরি) শিক্ষার্থীর জন্য লাগছে বার্ষিক ৩১০ ডলার করে। সভা মঞ্চে বড় স্ক্রিনে কয়েকজন শিক্ষার্থীর কথা তুলে ধরা হয়। ‘দ্যা অপ্টিমিস্টস’র সহযোগিতায় কীভাবে তারা স্বপ্নের জীবনের পথে এগোচ্ছেন তা বিবৃত হয় ভিডিওতে ধারণকৃত বক্তব্যে এবং সকলেই সংস্থাটির কর্মকতাদের মাধ্যমে স্পন্সরকারিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে অসহায় মানুষের ভাগ্য ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মরত সংস্থাগুলোর অন্যতম হিসেবে বাংলাদেশে এনজিও ব্যুরো থেকে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’ নিবন্ধিত হয়েছে। অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানসিক উন্নতির কথা বিবেচনা করে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চার বছরের ‘চাইল্ড স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম’ এবং উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিশ্ববিদ্যাললে চার বছরের ‘স্পেশাল স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম’-এর আওতায় নগদ অর্থ-সহায়তা দিয়ে আসছে সংস্থাটি।