নিউইয়র্ক: ‘বৈশাখী আবাহনে মানবের জয়গান’ এই স্লোগানে উদযাপিত হলো সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বর্ষবরণ ১৪৩২। জাহাঙ্গীরনগর আলামনাই এসোসিয়েশন অব আমেরিকা আয়োজনে এতে অংশগ্রহণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল হক।
গত শনিবার (৩ মে) নিউইয়র্কের ইয়র্ক কলেজ একাডেমিক কোর এট্রিয়ামে এই আয়োজন সম্পন্ন হয়। কৃষ্ণচূড়া ফুলকে বৈশাখ মাস তথা গ্রীষ্মাকালের ফুল হিসেবে পরিচিত করা, কৃষ্ণচূড়া ব্লসমকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে এবারের থিম ছিল কৃষ্ণচূড়া ফুল।
সকাল থেকেই ইয়র্ক কলেজ একাডেমিক কোর বিল্ডিংয়ের প্রাঙ্গণ সেজে ওঠে বৈশাখী সাজে। ছিলো জেইউ আলামনাই আখতার আহমেদ রাশার পরিকল্পনা ও অঙ্কনে ১০০ ফিট লম্বা চটের উপর আলপনা, যেটা ছোট বড় সবার নজর কেড়েছে এবং প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আর্টিফিশিয়াল কৃষ্ণচূড়া ফুল আনা হয়েছিল ছবি তোলার প্রপস হিসেবে। আরও ছিলো কৃষ্ণচূড়া ফুল ও গাছের বিশাল ক্যানভাস। সেটা এই বৈশাখী সাজ সজ্জাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এট্রিয়ামের ভিতরে রংধনুর সাতটি রঙের কাপড়ে আলপনা এঁকে সাজানো হয়।
পোশাকের পরিকল্পনায় ছিল সিলেটের মণিপুরী শাড়ি। রংধনুর উজ্জল রঙের প্রতিটি রঙ্গের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই পোশাকের সমম্বয় চারিদিকে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে দেয়। সেই সাথে এই আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ ছিল বায়োস্কোপ। নিউইয়র্ক তথা এই উত্তর আমেরিকায় সম্ভবত এইটাই প্রথম বায়োস্কোপ। এই বায়োস্কোপ পেয়ে অনেকে হয়েছেন নস্টালজিক, ফিরে গিয়েছেন শৈশবের বৈশাখী মেলায়। আর যারা কখনো বায়োস্কোপ দেখেননি, তারা আপ্লুত হয়েছেন এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতায়।
দুপুর ১টা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই তাদের পরিবারসহ মিলনায়তনে আসতে থাকে। দুপুরের খাবারের আয়োজনে থাকে নানা পদের ভর্তা, ভাজি, ইলিশ মাছ ভাজা, আমের চাটনি ও মুরগির কারি দিয়ে ভাত। শেষ পাতে দই-মিষ্টি।
এরপর শুরু হয় বৈশাখী প্যারেডের প্রস্তুতি। প্যারেড পরিচালনা করেন আয়োজনের সদস্য সচিব, জাবি আলামনাই তামান্না শবনম পাপড়ি। ঢোলের তালে, নাচে, গানে, বৈশাখী ফেস্টুন আর নানা বর্ণের শাড়ী-পাঞ্জাবিতে ইয়র্ক কলেজ একাডেমিক কোর এট্রিয়ামের বহিঃপ্রাঙ্গণ উৎসব মুখর হয়ে ওঠে। এ সময় এলামনাইদের কাছে ইয়র্ক কলেজের লাল ইট যেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। প্যারেডে যোগ দেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রতিনিধি ইশরাত জাহান, কাউন্সেলর এন্ড হেড অফ চ্যান্সেরি। উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল হক ও সাপ্তাহিক বাঙালি পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমেদ।
চা বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। এই পর্যায়ে আহ্বায়ক শামীম আরা বেগম ও সদস্য সচিব তামান্না শবনম পাপড়ি অনুষ্ঠান উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘এসো হে বৈশাখ’ পরিবেশিত হয় সব বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাইদের অংশগ্রহণে। এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এমএস আলম (ঢাবি), ফতেনূর আলম বাবু (রাবি), সাবিনা শারমিন নিহার (চবি), বেলায়েত চৌধুরী (সাস্ট) এবং এমএ রশিদ (শেরে বাংলা)।
অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয় গুণী শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়কে। তাঁকে নিয়ে মঞ্চে প্রবেশ করেন জামান মুনীর ও আখতার আহমেদ রাশা।